ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
হেঁচকি বা হিক্কায় আক্রান্ত হননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা মাঝে মাঝে আমাদের বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে এবং পালন করলে হেঁচকি দূর করা সম্ভব।
হেঁচকি কেন হয়
- দ্রুত খাওয়ার সময় পেটে কিছু বাতাস চলে গেলে হেঁচকি হতে পারে। বেশি পরিমাণ বাতাস ঢুকলে পাকস্থলী ফুলে যাবে। বাতাস গিয়ে ডায়াফ্রামে সমস্যা তৈরি করলে হেঁচকি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মসলা বা চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে হেঁচকি হতে পারে।
- অনেক বেশি কোমল পানীয় খেলে পেটে গ্যাস হয়ে হেঁচকি হতে পারে।
- ভয় বা উত্তেজনার সময় হেঁচকি হতে পারে।
- স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার, কিডনি রোগ, লিভারের রোগ, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের কারণে হেঁচকি হতে পারে।
- কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু ঘুমের ওষুধ খেলে এ সমস্যা হতে পারে। আবার কিছু বমির ওষুধ খাওয়ার পরও হেঁচকি হতে পারে।
মুক্তির উপায়
হেঁচকি বিরক্তিকর হলেও মারাত্মক সমস্যা নয়। কিছু বিষয় জানলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- শরীরে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ানো গেলে এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। এ জন্য কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে রাখা যেতে পারে। অথবা একটি ছিদ্রহীন ঠোঙা বা কাগজের ব্যাগে মুখ আটকে দম ছাড়ুন। আবার ওটা থেকে দম নিন। খেয়াল রাখতে হবে, ঠোঙার ভেতর যেন বাইরের বাতাস না ঢোকে।
- বরফকুচি দিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেতে পারেন। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিও খেতে পারেন। তবে ঠান্ডা পানি এ ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
- জিহ্বা সামনের দিকে টেনে ধরে রাখতে পারেন।
- স্বাভাবিকভাবে হেঁচকি ওঠা ব্যক্তিকে অন্যমনস্ক বা ঘাবড়ানোর জন্য ভয় দেখালেও তা বন্ধ হতে পারে।
- জিহ্বার নিচে আধা চা-চামচ চিনি দিয়ে রাখতে পারেন। যতক্ষণ পর্যন্ত চিনি না গলে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাখতে হবে। এভাবে কয়েকবার দিতে পারেন।
- আঙুল দিয়ে জিহ্বার পেছনে শক্ত তালুতে হালকা স্পর্শ করতে পারেন। এতে হেঁচকি কমে যাবে।
চিকিৎসা
যদি এরপরও হেঁচকি না কমে, তবে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ক্লোরপ্রমাজিন, বেকলোফেন, হ্যালোপেরিডল, মেটাক্লোরাপ্রোমাইড ইত্যাদি ওষুধ সাধারণত চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া কিডনির রোগীর যদি এ ধরনের সমস্যা হয়, হেঁচকির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকে, তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
হেঁচকি প্রতিরোধে
- ধীরেসুস্থে খাবার খেতে হবে।
- কোমল পানীয় বেশি পান করা যাবে না।
- মসলাযুক্ত ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- কোনো ওষুধের কারণে হেঁচকি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সেটা পরিবর্তন করতে হবে।
লেখক: কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা
Discussion about this post