হার্টবিট ডেস্ক
‘অর্গানিক পণ্যের বিষয়ে আমাদের ধারণা খুব কম। আমাদের দেশে অর্গানিক পণ্যও খুব কম। শুধু অর্গানিক পণ্য হিসেবে দইটাই আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু উন্নত বিশ্বে, কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতেও দই তৈরিতে অর্গানিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। অর্গানিক ব্যাকটেরিয়া যখন ক্লাসিফাইড হয়, তখন সেই ব্যাকটেরিয়াগুলোর গুণমান পুষ্টিগত মান আর স্বাস্থ্যের উপকারিতা সমৃদ্ধ হয়। আমরা হয়তো শুধু জানি, দই কেবল হজমে সহায়তা করে। কিন্তু দইয়ের পুষ্টিগুণ শুধু এইটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শরীর পুরোপুরি সুস্হ রাখতে যে ধরনের কম্পোনেন্ট প্রয়োজন, সে ধরনের মাইক্রো অর্গানিজম দইয়ের ভেতরে আসতে পারে। অর্গানিক দইয়ের সেটাই মূল বিষয়’—কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, যিনি দইয়ের ওপরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৬ সালে জাপান থেকে। দেশে ফিরে অর্গানিক দই নিয়ে কাজ শুরু করেন।
অধ্যাপক হারুন বলেন, আমি যখন ডেইরি ফার্মে শিক্ষকতায় জয়েন করি, তখন দেখলাম যে, আজ হয়তো ভালো দই তৈরি হচ্ছে, কাল হয়তো ভালো হচ্ছে না। হয় টক হচ্ছে, নয় গঠনটা অমসৃণ, ভালো হচ্ছে না। আমি পড়ালেখা করে দেখলাম যে বিশ্বের দইয়ের সঙ্গে আমাদের দই মিলছে না। আমরা দেশীয় ভাষায় যাকে বলি ‘দইয়ের সাজ’ যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘পিউস কালচার’, সেটা যদি ক্লাসিফাইড না হয় তাহলে আমরা যে দই তৈরি করি, তার গুণমান খুব ভালো হবে না। এ বিষয়ে আমাদের দেশে খুব একটা গবেষণা হয়নি। এ কারণে ঐ জায়গাটায় গ্যাপ আছে। আমি জাপানে দই নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাই। যেখানে দইয়ের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্হের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পাই। আমি সেখানে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গার দই নিয়ে গিয়েছিলাম। জাপান থেকে ফিরে আমি দই তৈরির কাজ শুরু করি। পিউস কাটা কালচার হলে দই মসৃণ হবে, খেলে পেটে গ্যাস হবে না এবং দইয়ের গঠনটা ভালো হবে। এটি বাণিজ্যিকভাবে করতে চাইলে অবশ্যই মেশিন প্রয়োজন। দইয়ের যে কালচারটা আমরা ল্যাবে তৈরি করি, সেটা ড্রাই ফরমেটে আনতে হবে। তাহলে এটা সহজে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। অর্ডার করলে আমরা এই দই তৈরি করে দেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠান হলে সেখানে অতিথি আপ্যায়নে দেওয়া হয় এ দই। প্রায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ কাপ তৈরি করে থাকি। সাধারণত ১০০ গ্রামের কাপে এই দই তৈরি করে থাকি। দাম পড়ে ২০ টাকা করে। এটাতে আমরা লাভের চিন্তা করিনি।
বাকৃবির এই শিক্ষক বলেন, যে যত বেশি ব্যাক্টেরিয়াল ফার্মেন্টেট প্রোডাক্ট খাবে, সে তত বেশি দিন বাঁচবে। এটা সারা বিশ্বেই স্বীকৃত। অর্গানিক দইয়ের অনেক গুণ। অর্গানিক দই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যানসার প্রতিরোধ করে, ত্বক ভালো রাখে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়ের হাসান বলেন, আমরা দই খেলে সবসময় আমাদের ক্যাম্পাসে ডেইরি সায়েন্স বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি অর্গানিক দই খেয়ে থাকি। এই দই খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে সেরা।
Discussion about this post