হার্টবিট ডেস্ক
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে চিকিৎসা গবেষণার উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়েনি। গত বছরের ন্যায় এ অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ২৩টি গবেষক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম শুরুর জন্য নির্বাচিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরেও এ তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে।
তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার অবকাঠামো তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রম প্রবর্তন করা, গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশের স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, অনুজীববিদ্যা, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির সার্বিক উন্নয়নে ও স্বাস্থ্য খাতের নতুন উদ্ভাবনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা বিগত অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকার একটি ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল’ গঠন করেছিলাম। এ তহবিলকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ নীতিমালার আলোকে জাতীয় পর্যায়ের গঠিত কমিটি কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত কৌশল ও কার্যক্রম অনুযায়ী আমরা স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। এর অংশ হিসেবে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চ বিনিয়োগ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। চিকিৎসা শিক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চিকিৎসা শিক্ষার সব স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে এক প্ল্যাটফর্মের অধীনে নিয়ে আসা, পরীক্ষা পদ্ধতি আধুনিকীকরণ, শিক্ষকদের ক্রমাগত প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকদের গবেষণা জোরদার করা, বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা ইত্যাদি কার্যক্রমকে আমরা অগ্রাধিকার দেব।
মোস্তফা কামাল বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সেবার মান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার ব্যয় জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা, নার্সিং শিক্ষার আধুনিকায়ন ও দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। নার্সিং কলেজের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ঢাকা নার্সিং কলেজ এক্রিডিটেসন চলতি অর্থবছরেই সম্পন্ন করব।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রমের উন্নয়নের জন্য ৮টি মেডিকেল কলেজে সিমোলেশন ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
Discussion about this post