হার্টবিট ডেস্ক
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালকে ঘিরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা নামের ভুঁইফোঁড় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি শর্ত উপেক্ষা করে গড়ে উঠা এসব প্রতিষ্ঠানে কখনো ভুল চিকিৎসা, আবার কখনো অপচিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন রোগী। কিন্তু এসব দেখারও যেন কেউ নেই। মাঝে মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আটক করে। তবে স্থায়ীভাবে কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশের সকল অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতাল ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসছে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিভিল সার্জন দফতর। এ ব্যাপারে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাজশাহী জেলায় অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হালনাগাদ সংখ্যা তার কাছে নেই। তবে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর রাজশাহী মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় এ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পরে জানানো হবে।
সিভিল সার্জন বলেন, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নিবন্ধন নবায়ন করেননি। অনেকে আবেদন করেছেন। যারা নিবন্ধন নবায়ন করেননি এমনকি আবেদনও করেন নি তাদের তালিকা প্রস্তুত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীতে বিগত কয়েক বছরে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের দালালের মাধ্যমে সুচিকিৎসার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করছে কিছু ক্লিনিক-হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ানসহ নানা ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে আবার রামেক হাসপাতালে ফেরত পাঠানো হয়। মাঝে মাঝেই এধরণের ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছে না স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের।
অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের কার্যালয়কে ম্যানেজ করে চলে নামসর্বস্ব ওইসব ক্লিনিক-হাসপাতাল। সকলের চোখের সামনে অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক চললেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
রাজশাহীতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভুল ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুর হিসাবও রাখেন না সংশ্লিষ্টরা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও থানায় খোঁজ নিয়েও এসব বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে পুলিশ বলছে, মাঝে মাঝেই ভুল ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার কতিপয় বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালে হট্টগোল হয়। বিক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনেরা কখনো কখনো দায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এ নিয়ে থানায় মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের হস্তক্ষেপে রোগীর স্বজন ক্লিনিক-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য হন।
নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ‘রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মাঝে মাঝেই বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভাঙচুর করে। পুলিশ গিয়ে তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। কিন্তু এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা নেন না।’
পুলিশের ভাষ্য, নগরীতে সরকার অনুমোদিত কতটি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকর সেন্টার রয়েছে তার সঠিক তালিকা কখনো প্রকাশ করে না সিভিল সার্জনের কার্যালয়। অথচ এটা তাদের একটা দায়িত্ব।’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীতে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে হাসপাতাল ৫৩টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১৬টি। তবে অনুমোদন না থাকলেও আরও অন্তত একশ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক চলছে। এগুলোর বেশিরভাগই রাজশাহী শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় অবস্থিত। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের একেবারেই নাকের ডগায় এবং রামেক হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।
ফলে ওইসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের দালালরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে নির্বিঘ্নে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে রোগীরাও প্রতারিত হন। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুও হয়। মাঝে মাঝে পুলিশ এবং র্যাব রামেক হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেফতার করলেও কয়েকদিন পর তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িয়ে যান।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ইতোমধ্যে রাজশাহীতে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতালের তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সৌজন্যে-ইত্তেফাক
Discussion about this post