হার্টবিট ডেস্ক
গত ৮ মে উত্তর কোরিয়ায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। সে সময় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৬৮ এবং একজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যেই দেশটিতে দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পরই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন পিয়ংইয়ংয়ে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ায় করোনা প্রাদুর্ভাবের পর বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, উত্তর কোরিয়ায় ওষুধের সীমিত সরবরাহ, প্রয়োজনীয় টেস্টের অভাব এবং কোনো ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম না থাকায় ভাইরাসটি ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে করোনাভাইরাস যেন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ‘জ্বরে’ আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ। অপরদিকে মারা গেছে ৫৬ জন।
কর্তৃপক্ষ সরাসরি করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পরিষ্কার করে বলছে না। আক্রান্ত বা মৃত্যুতে জ্বরের কথা বলা হচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে যে, করোনা শনাক্তের জন্য তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেই। এসব বিষয় নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়া বলছে, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা ও ওষুধ গ্রহণে অসতর্কতার কারণে এখন পর্যন্ত দেশটিতে বেশি সংখ্যক লোকের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তর কোরিয়া করোনা মহামারির শুরু থেকেই কঠোর অবরোধ বজায় রেখেছিল। কিন্তু দেশটির শেষ রক্ষা হলো না। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার জন্য করোনা মোকাবিলা বেশ কঠিন হবে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে উত্তর কোরিয়া তাদের দেশে করোনার অস্তিত্ব নেই বলেই দাবি করে এসেছে। এছাড়া সীমান্তেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকেই দেশটির সীমান্ত বন্ধ ছিল।
বাইরের কোনো দেশ থেকে ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকৃতি জানানো উত্তর কোরিয়ায় একজন লোকও ভ্যাকসিন নিতে পারেননি।
গত ১৩ মে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়োন সুক ইয়োল দেশটিতে ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহের প্রস্তাব দেন। তারা প্রতিবেশী দেশটিকে সহায়তার আগ্রহ জানালেও উত্তর কোরিয়া এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার একীকরণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পায়ননি। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। তবে দেশটিতে করোনার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবেদন তাদের পাঠানো হয়নি।
রাজনৈতিকভাবে উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং উনের পক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়টি কিছুটা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের চির শত্রু দেশ। আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাই শত্রুদের কাছ থেকে সরাসরি সাহায্য গ্রহণ করার কোনো ইচ্ছা কিমের নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে আর কোনো দেশের কাছ থেকে সহায়তা না নিলেও চীনের কাছ থেকে উত্তর কোরিয়া সহায়তা নেবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চীন থেকে মেডিকেল সহায়তা নিতে যাচ্ছে পিয়ংইয়ং।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব উত্তর কোরিয়ায় ‘মহা বিপর্যয়’ সৃষ্টি করেছে। দেশটির সব প্রদেশ, শহর এবং কাউন্টি সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে এবং সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ায় টিকাবিহীন জনসংখ্যার মধ্যে রোগের বিস্তার ধীর করতে কোয়ারেন্টাইনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও দেশটিতে এখন প্রায় প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক নতুন কেস শনাক্ত হচ্ছে।
Discussion about this post