অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
উচ্চ রক্তচাপ এখন প্রায় ঘরে ঘরে। তবে আমরা অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের বিষয়টি খেয়াল করি না। লক্ষণ থাকলেও অবহেলা করি। অনেকে সঠিক লক্ষণ চিনি না। আবার এমনও হয়, অনেকের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ আসে নীরবে। ধ্বংস করে তবে জানান দেয়।
উচ্চ রক্তচাপকে সময়মতো চিকিৎসকের নজরে না আনলে হতে পারে বড় রকমের সমস্যা। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এমনকি হৃদ্যন্ত্র হতে পারে বিকল। এ জন্য দরকার নিয়মিত রক্তচাপ মেপে দেখা।
উচ্চ রক্তচাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসককে না জানিয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।
সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ১১৩ কোটির মতো মানুষ উচ্চ রক্তচাপের শিকার। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র একজনের রক্তচাপ আছে নিয়ন্ত্রণে। বাকিরা জটিল হওয়ার অপেক্ষায়। নতুন ঘটনা হলো, এখন রক্তচাপ কেবল বয়স্ক নয়, তরুণদের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
উচ্চ রক্তচাপের সতর্ক সংকেত
বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্টরা উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে কিছু সতর্ক সংকেতের কথা বলছেন:
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
আমরা মনে করি, কেবল সাইনাস হলে বা আঘাত পেলে কিংবা নাক জোরে ঝাড়লে রক্ত পড়ে। কিন্তু রক্তচাপ হলেও রক্ত পড়া অসম্ভব নয়। নাক দিয়ে রক্ত ঝরলে তাই চটজলদি চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। - মাথা ধরা
মাথা ধরার ব্যথাও হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের জন্য। যাদের মাথার পেছন দিকে খুব ব্যথা থাকে, তাদের অবশ্যই রক্তচাপ মাপানো উচিত। বেশির ভাগ রোগী হয়তো চিকিৎসকের কাছে যায় খুব মাথা ধরা নিয়ে। মাথা ধরার ওষুধ খেয়েও ফেলেছে ফার্মেসি থেকে নিজ ইচ্ছায়। পরে চিকিৎসকের কাছে গেলে দেখা গেল তার রক্তচাপ অনেক উঁচুতে। তাই মাথা ধরা হলে হেলাফেলা করবেন না। - খুব ক্লান্তি
কাজ করতে পারা যাচ্ছে না ঘরে কিংবা অফিসে। ক্লান্তি ছেয়ে আছে সারা শরীর। এমন হলে প্রেশার চেক করে দেখুন। কিছু না করেও ক্লান্ত বোধ করলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। - শ্বাসকষ্ট
রক্তচাপ উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর তাই একেও নজরে আনতে হবে। - ঝাপসা দৃষ্টি
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণহীন হলে দৃষ্টিতে সমস্যা হতে পারে। ঝাপসা হয়েছে দৃষ্টি আর চোখের সামনে দেখা যায় কালো ফুলকি, এমনকি হঠাৎ দেখতে না পাওয়াও হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ। তাই ঝাপসা দৃষ্টিকে শুধু চোখের অসুখ বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। - বুকব্যথা
উচ্চ রক্তচাপ হলে হতে পারে বুকব্যথা। এমন হলে দ্রুত যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
পরামর্শ
- চিকিৎসক ওষুধ দেবেন। সেই ওষুধ খেতে হবে নিয়মিত।
- কোনো কারণে চিকিৎসককে না জানিয়ে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
- মানসিক চাপ সামলাতে হবে এবং নিয়মিত ঘুমাতে হবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
Discussion about this post