ডা. নূরজাহান বেগম
প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এ সময় অনেক শিশুই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
- ভাইরাস জ্বর সাধারণত ৩-৫ দিনে ভালো হয়ে যায়। তবে গত দুই-এক বছরে ভাইরাস জ্বর একটু দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর জন্য অস্থির না হয়ে ধৈর্য ধরতে হবে।
- জ্বরের সময় শিশুকে আরামদায়ক কাপড় দিতে হবে, অতিরিক্ত কাঁথা-কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না। অনেকের ধারণা, জ্বর হলে গোসল করানো যাবে না। এই সময়েও শিশুদের নিয়মিত গোসল করিয়ে দিতে হবে, খুব কম ওজনের ছোট শিশু ছাড়া।
- মুখে খাওয়ার ওষুধ খেতে না পারলে মলদ্বারে সাপোজিটরি দেওয়া যাবে।
- ন্যূনতম চার ঘণ্টা পরপর ওষুধ দেওয়া যাবে। সঙ্গে শরীর, মাথা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত জ্বর হলে গোসলও করিয়ে
দেওয়া যাবে। - অতিরিক্ত জ্বরে অনেক সময় কোনো কোনো শিশুর খিঁচুনির প্রবণতা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে অস্থির না হয়ে শিশুকে কাত করে দিতে হবে, যাতে লালা শ্বাসনালিতে না যায় এবং দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। শিশুকে কোলে করে নিয়ে মাথায় পানি দেওয়া, অস্থিরতা দেখানো এগুলো শিশুর জন্য আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে।
- দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না, বিশেষ করে অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক ও আইবুপ্রোফেন।
- এই সময় শিশুরা খেতে চায় না, তাই জোরাজুরি না করে অল্প অল্প করে বারবার শিশুর পছন্দ অনুযায়ী খাবার দিতে হবে। পানি ও তরলজাতীয় খাবার বেশি দিতে হবে। জ্বরের মধ্যে পানিশূন্যতা যেন কোনোভাবেই না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশু যদি টানা ৮-১২ ঘণ্টা প্রস্রাব না করে তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
- জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকলে ঘন ঘন তরল খাবার, লেবু পানি, এক বছরের বড় শিশুদের জন্য মধু, তুলসী পাতার রস, গরম পানি দিতে পারেন। নাক পরিষ্কার রাখতে হবে, প্রয়োজনে নরসল ড্রপ ব্যবহার করতে পারবেন।
- শ্বাসের গতি খেয়াল রাখতে হবে। যদি বেড়ে যায়, শ্বাস নেওয়ার সময় বুক দেবে যায় কিংবা অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসের সঙ্গে শব্দ হতে থাকে, কথা বলতে বা খেতে সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
লেখক: স্পেশ্যালিস্ট, পেডিয়্যাট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
Discussion about this post