ডা. উম্মে নুসরাত আরা
যেকোনো বিবেচনায় ব্লাড ক্যানসার ভয়াবহ রোগ। কিন্তু খুব দ্রুত ও যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু হলে রোগীর ভালো সাড়া পাওয়া যায়।
শিশুদের যেসব ক্যানসার হয়ে থাকে, তার মধ্যে বেশি হয় লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার। সারা বিশ্বে শিশুদের সব ক্যানসারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হলো লিউকোমিয়া। প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন হাজার শিশু লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়।
লিউকোমিয়া কী
লিউকোমিয়া বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জার রোগ। রক্তে যেসব কণিকা থাকে, সেগুলো অস্থিমজ্জায় তৈরি হয় এবং ধাপে ধাপে পরিপক্ব বা ম্যাচিউর হয়ে রক্তে আসে। যদি কোনো কারণে পরিপক্বতার ধাপগুলো সঠিকভাবে না হয় বা ম্যাচিউরেশন অ্যারেস্ট হয়, তখনই লিউকোমিয়া রোগ হয়।
রোগের কারণ
লিউকোমিয়ার এককভাবে কোনো কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে কিছু জেনেটিক মিউটেশন ও ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা এই রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে
জানা যায়।
লিউকোমিয়া মূলত দুই প্রকার:
১. অ্যাকিউট লিউকোমিয়া
- অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া বা এএলএল
- অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকোমিয়া বা এএমএল
২. ক্রনিক লিউকোমিয়া
- ক্রনিক লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া বা সিএলএল
- ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকোমিয়া বা সিএমএল
লিউকোমিয়ার লক্ষণ
- ঘন ঘন জ্বর আসা
- শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- অস্বাভাবিক দুর্বলতা
- শরীরে ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা
- চামড়ার নিচে কালো রক্ত জমা ছোপ ছোপ দাগ
- শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাত হওয়া
- মাড়ি ফুলে যাওয়া
- লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
- যকৃৎ ও প্লীহা বৃদ্ধি পাওয়া
- খিঁচুনি বা হঠাৎ জ্ঞান হারানো
লিউকোমিয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে শিশুর রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করাতে হবে এবং পরে প্রয়োজন অনুসারে বোনম্যারো ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হবে। যত দ্রুত রোগ নির্ণয় সম্পন্ন হবে শিশুটির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ততই বৃদ্ধি পাবে।
চিকিৎসার পদ্ধতি
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর নিরাময় সম্ভব।
- লিউকোমিয়া রোগের প্রধান চিকিৎসা কেমোথেরাপি।
- অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে রেডিওথেরাপি ও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন।
লেখক: শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলোজি বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post