হার্টবিট ডেস্ক
নারীদের জন্য ঋতুস্রাব একাধারে একটি আশীর্বাদ ও অভিশাপস্বরূপ। নিয়মিত ঋতুস্রাবে যেমন শরীর থেকে দূষিত রক্তগুলো বের হয়ে যায়, ঠিক তেমনি ঋতুস্রাব চলাকালীন পাঁচ থেকে সাত দিন মেয়েদের এক নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। সাধারণত মেয়েরা ২৮ দিন পরপর ঋতুস্রাবের সম্মুখীন হয়ে থাকে। তবে এই সময়কাল ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
এই সময়গুলোতে সাধারণত তলপেটে ব্যথা, মুড সুইং, স্তন ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়াসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো পিরিওডের সময় দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক, তবে এসব কারণে ব্যথার পরিমান বাড়লে সেটা অবশ্যই আশঙ্কার বিষয়। ঋতুস্রাবের সময় পার হয়ে যাওয়া বা দেরিতে ঋতুস্রাব হওয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও যদি নিয়মিত ঋতুস্রাব না হয় বা ঋতুস্রাব কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায় তবে অবশ্যই যেতে হবে ভালো কোন গাইনী ডাক্তারের কাছে। ঋতুস্রাবের বেশ কিছু লক্ষণ আছে যার কারণে ঋতুস্রাব হতে পারে অনিয়মিত বা এসব লক্ষণ থেকে হতে পারে মারাত্মক কোনো অসুখ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই লক্ষণগুলো:
১. অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ : ঋতুস্রাবের শুরুর দিনে বা প্রথম দুদিন রক্তক্ষরণের পরিমান সামান্য বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই সময় বা ঋতুস্রাব চলাকালীন যে কোন সময় যদি দুইঘণ্টা পরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড বদলাতে হয় তবে সেটা মোটেও কোনো ভালো লক্ষণ নয়। এমন সমস্যা যদি নিয়মিত হতে থাকে তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
২. ৭ দিনের বেশি ঋতুস্রাব হওয়া : ঋতুস্রাব যদি সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি দিন ধরে চলে তবে সেটা আশঙ্কার বিষয়। অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের ফলে যেমন শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে তেমনি এটা জরায়ুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণও হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা জরুরী।
৩. ঋতুস্রাব দেরিতে শুরু হওয়া বা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া : মেয়েদের দেরিতে ঋতুস্রাব শুরু হওয়াকে বলে প্রাইমারি অ্যামেনোরিয়া। ঋতুস্রাব যদি সঠিক সময়ে অর্থাৎ ১৬ বছরে মধ্যে শুরু না হয় বা শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়, তাকে বলা হয় সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া। এই দুই ক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৪. ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত ব্যথা : ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা মেয়েদের একটি অন্যতম সমস্যা। ঋতুস্রাবের সময় হালকা ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ব্যথা যদি অতিরিক্ত হয় তবে তা চিন্তার বিষয়। এর সাথে যদি ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, বমিভাব থাকে তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. অনিয়মিত ঋতুস্রাব : জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম অথবা মানসিক অবসাদ, যে কোনো কারণেই ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। আবার কেউ যদি গর্ভবতী হন, তবে বাচ্চা প্রসবের পর তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর শেষ পর্যন্ত ঋতুস্রাব বন্ধ থাকতে পারে। যদি এই কারণগুলো ছাড়া কোনো কারণে আপনার ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়, তবে দ্রুত ডাক্তার দেখান।
৬. ঋতুস্রাবের সময় স্তনে ব্যথা : ঋতুস্রাবের সময় হাল্কাভাবে স্তনের চারপাশে ব্যথা হওয়া বেশ প্রচলিত একটা সমস্যা। তবে এই ব্যথা যদি অতিরিক্ত হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় স্তনের চাকাভাব থেকে স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৭. ডায়রিয়া বা বমি ভাব : ঋতুস্রাবের সময় জরায়ু থেকে প্রোস্টাগ্যানডিস নামক এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের কারণে অনেক সময় মাথাঘোরা বা বমি অথবা ডায়রিয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে যদি এই লক্ষণগুলো খুবই গুরুত্বর পর্যায়ে দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৮. মুড সুইং : ঋতুস্রাব চলাকালীন মেজাজ খিটখিটে থাকা বা অবসাদ অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। ঋতুস্রাবের আগের এবং পরের এই পরিবর্তনকে বলে পোস্ট মেন্সট্রুয়াল সিনড্রম বা পিএমএস। অস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক দুটি হরমোনের কারণে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসময় খাদ্যাভাসে পরিবর্তন বা মেডিটেশনে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৯. মাইগ্রেন : এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি দশজন নারীর মধ্যে চারজন ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের শিকার। শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে এ সময় ব্রেইনে এক ধরণের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা থেকে এই মাথাব্যথার সূত্রপাত হয়। তবে এই মাথাব্যথা যদি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
Discussion about this post