হার্টবিট ডেস্ক
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বানীনগর গ্রামের বাসিন্দা শরিফা বেগম (৩৫)। প্রায় চার বছর আগে হাতের একটি আঙুলে হঠাৎ দেখা দেয় ফোঁড়া। সেখান থেকে হয় ঘা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে আঙুল কেটে ফেলা হয়। এর কিছুদিন যেতেই দুই হাতের আঙুলেই ফোঁড়া দেখা দেয়। এর পর থেকেই শরিফার একেরপর এক আঙুলে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ।
‘বিরল’ এই রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় শরিফার ভ্যানচালক স্বামীর পক্ষে টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছে পরিবারটি।
জানা যায়, বানীনগর গ্রামের শামছুল হক দুলুর স্ত্রী শরিফা। স্বামী একজন ভ্যানচালক। তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার তাদের। জায়গা জমি বলতে তেমন কিছুই নেই। শুধু বাড়ি ভিটের পাঁচ শতক জমি। এর মধ্যে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রাণ নিঃস্ব ভ্যানচালক শামছুল।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলছেন, শরিফা বেগম ‘সিস্টেমিক স্কেলেরোসিস’ রোগে আক্রান্ত। তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগে চিকিৎসা নিতে হবে। এজন্য তাকে ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এতে তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। ভ্যানচালক শামছুল হক দুলুর পক্ষে এত টাকা ব্যয় করার সামর্থ্য নেই।
বিরল রোগে আক্রান্ত শরিফা বেগম বলেন, আমার হাত-পায়ে ঘা হয়েছে। এতে প্রতিবেশীরা আমার কাছে আসতে চায় না। এ রোগ সন্তানদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সে ভয়ে তাদের আদর করতে পারি না। আমি আমার সন্তানদের আদর করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী ভ্যানচালক। তার পক্ষে এত টাকা জোগানো সম্ভব নয়। তাই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা ছাড়া আমি সুস্থ হতে পারবো না।
শরিফা বেগমের স্বামী শামছুল হক দুলু বলেন, আমার স্ত্রী এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখ-মুখ ফুলে গেছে, হাত-পা কালো হয়েছে। পরে তাকে রংপুরে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, এটি ব্লাড ক্যানসার হতে পারে। তাকে দ্রুত চিকিৎসা না করাতে পারলে নাকি বাঁচানো যাবে না।
তিনি বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অজয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়েছিলেন, আমার স্ত্রীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে রিউম্যাটোলজি বিভাগে চিকিৎসা করালে সুস্থ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিন-চার লাখ টাকা খরচ হবে। একজন ভ্যানচালক হয়ে তিন লাখ টাকা কোথায় পাবো?
শামছুল হক দুলু আরও বলেন, প্রায় চার বছর থেকে তার চিকিৎসা করছি। ‘অজ্ঞাত’ এই রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে গিয়ে সব শেষ করছি। এখন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করা সম্ভব না।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার রায় বলেন, ওই নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই সময় তাকে বলা হয়েছিল যে তিনি ‘সিস্টেমিক স্কেলেরোসিস’ রোগে আক্রান্ত। তাই দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে রিউম্যাটোলজি বিভাগে চিকিৎসা নিতে হবে।
এ বিষয়ে তুষভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর ইসলাম বলেন, শুনেছি তার এই রোগের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সমাজসেবা অফিসে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও সাহায্য কবরো। পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।
Discussion about this post