ছয় মাস বয়সের শিশু সাজ্জাদ। চার মাস ধরে ভর্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর আগে দেড় মাস বিভিন্ন হাসপতালে ঘুরে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ক্যান্সার বিভাগে।
জন্মের প্রথম কয়েকদিন পেটে ব্যথা নিয়ে কান্নাকাটি করত। তখনও মা সায়েরা খাতুন জানতেন না কী অপেক্ষা করছিল। ধীরে ধীরে পেট ফুলতে থাকে, তখন স্থানীয় ফার্মেসি দোকান থেকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনে খাওয়াতে থাকেন। কিন্তু পেট আরও বেশি ফুলতে থাকায় নিয়ে যান শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে। এরপর লালমনিরহাট ও রংপুরের বেসরকারি কয়েকটি হাসপতাল ঘুরে ভালো কোনো ফল না পেয়ে রেফার্ড করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু ক্যান্সার বিভাগে। এখানে ভর্তির পর জানতে পারেন পেটে টিউমারের কারণেই ফুলছে এবং এটিও ক্যান্সারের একটি ধরন বলে জানান ঢাকা মেডিকেলর চিকিৎসক।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। এমনকি ক্যান্সার নিয়ে শিশু জন্মের হারও এখন বাড়ছে। এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি।
এ বিষয়ে বাবা মায়ের কাজের পরিবেশসহ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়েট্রিক হেমাটোলাজি অ্যান্ড অনকোলজি (শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যপক ডা. জোহরা জামিলা খান।
তিনি বলেন, বাবা কর্মক্ষেত্রে রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে তাহলে শিশুদের ক্যান্সার নিয়ে জম্মানোর ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্তায় মা ধুমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে শিশু গর্ভাবস্থাতেই আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া খাদ্য উৎপাদনে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, খাবারে ফরমালিনের ব্যবহারসহ নানা কারণে শিশুর ক্যান্সার হতে পারে।
বাংলাদেশে শিশুদের ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়লেও সেই অভিভাবক পর্যায়ে অসচেতনতার কারণে শুরুতেই সেটি শনাক্ত হয় না। ফলে দীর্ঘদিন নানা অপচিকিৎসায় জটিল আকার ধারণ করে। তবে শুরুতে এটি শনাক্ত করা গেলে ৭৩ শতাংশ শিশুই প্রাথমিক পর্যায়ে সুস্থ হতে পারে। বাকি ২৫ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার দরকার হতে পারে।
ডা. জোহ্রা জামিলা বলেন, শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসা শিশুদের ক্ষেত্রে কার্যকর হওয়ার হার অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিশুদের কিডনি, হার্টসহ অন্যান্য অঙ্গগুলো বেশি কার্যকর থাকে। এসময় থেরাপিগুলো অনেক বেশি কার্যকর হয়।
শিশু ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে ডা. জোহ্রা জামিলা খান বলেন, শিশুর ক্যান্সার শনাক্তে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে মা। বাচ্চার সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, শরীরের স্বাভাবিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না। চোখের রঙ্গের পরিবর্তন, শরীরের কোথাও সমান্য ফুলে যাওয়া, ত্বকের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হওয়া, গলার দুই পাশে বা পেটে চাকা ধরে ফুলে যাওয়া, বাচ্চার অণ্ডকোষ কোনোভাবে কমে যাওয়া এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
দেশে অন্যান্য ক্যান্সার চিকিৎসার মতো শিশু ক্যান্সার চিকিৎসাও অনেকটা ব্যয়বহুল। যদিও দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন করায় সেটি অনেকটাই কমে এসেছে। এছাড়া সরকারিভাবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকার এখন পঞ্চাশ হাজার টাকা দিচ্ছে। তবুও এই চিকিৎসা এখনও সাধারণের নাগালের বাইরে। তবে ক্যন্সার চিকিৎসায় দেশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।
Discussion about this post