হার্টবিট ডেস্ক
শরীরচর্চায় যদি ভুল থেকে যায় তবে সেটা আয়ু বাড়ানো বদলে কমাতেও সক্ষম।
দীর্ঘায়ু পাওয়ার যেকেনো পদ্ধতির মূল উপাদান হিসেবে শরীরচর্চা থাকবেই। গাদা গাদা বৈজ্ঞানিক গবেষণা তা বলেছে অসংখ্যবার।
সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, শুধু হাঁটাহাঁটির অভ্যাস দীর্ঘায়ু দিতে পারে।
আর একাধিক গবেষণা একই ফলাফল পেয়েছেন তাদের গবেষণায়।
মোদ্দা কথা হলো শরীরচর্চা করলে বেশিদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। তবে ওই শরীরচর্চায় যদি ভুল থেকে যায় তবে সেটা আয়ু বাড়ানো বদলে কমাতেও সক্ষম।
অতিরিক্ত ব্যায়াম: প্রিয় গানের শুনছেন আর ট্রেডমিল’য়ে দৌড়াচ্ছেন। এত ভালো অনুভব করছেন যে আজ যেন সারাদিন দৌড়ানো যাবে। এখানেই বিপত্তি।
শরীরচর্চার অবশ্যই একটা সীমারেখা থাকতে হবে। অনেক প্রশিক্ষক আপনাকে অনেক পরামর্শ দেবে, তবে নিজের শরীরকে নিজের চাইতে ভালো আর কেউ বুঝবে না। শরীরের ক্ষমতা বুঝেই ব্যায়াম করতে হবে।
আবার প্রতিদিনই যে ভারী ব্যায়াম করতে হবে এমনটা ভাবাও ভুল।
পলগ্রেভ কমিউনিকেশন’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় অংশ নেয় ৬৯৯ জন জাপানি নাগরিক যারা সবাই জন্ম নিয়েছেন ১৯০১ সালের পরে।
পেশার ভিত্তিতে তাদেরকে চার দলে ভাগ করা হয়। বাদ্যযন্ত্র বাদকদের একটি দল, গল্পকারদের একটি দল আর একটি দল ছিল ‘কাবুকি’ শিল্পিদের।
প্রাচীন জাপানি নৃত্যশিল্প ‘কাবুকি’, যেখানে শিল্পিদের ক্রমাগত শারীরিক কসরত করতে হয়।
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই গবেষণার বরাত দিয়ে জানানো হয়, গবেষকদের ধারণা ছিল এই ‘কাবুকি’ শিল্পিরা যেহেতু বেশি শারীরিক পরিশ্রম করছেন, তারাই দীর্ঘজীবী হবেন। আসলে হয় উল্টোটা। এই দলের গড় আয়ু অন্যান্য দলের সদস্যদের তুলনায় অনেকটা কম হয়।
সেখান থেকে বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন প্রতিনিয়ত শরীরের ওপর অত্যধিক চাপ দিলে তা আসলে আয়ু কমায়।
আরেকটি গবেষণা, যা প্রকাশিত হয় ‘সেল মেটাবলিজম’ শীর্ষক সাময়িকীতে, অতিরিক্ত ব্যায়ামের ভিন্নধর্মী ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে।
‘সুইডিশ স্কুল অফ স্পোর্ট অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্স’য়ের ‘ডক্টরাল’ শিক্ষার্থী, এই গবেষণার প্রধান লেখক মিকায়েল ফ্লকহার্ট বলেন, “হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেইনিং (এইচআইআইটি)’ অতিরিক্ত করা হলে তা কোষের ‘মাইটোকন্ড্রিয়াল ফাংশন’য়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এবং ‘ইনসুলিক রেজিস্ট্যান্স’ বাড়ায়”
ব্যায়াম নিয়ে দুশ্চিন্তা: যে ব্যায়াম প্রায় সকল শারীরিক সমস্যার সমাধান সেটাকেই অনেকে দুশ্চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। নতুন নতুন ব্যায়ামের জগতে এসে কোনো ব্যায়াম বাদ পড়ে গেলো নাকি, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো কি-না ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন অনেকেই।
‘হেলথ সাইকোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় মোট ৬১ হাজার মানুষকে নিয়ে পর্যালোচনা করেন গবেষকরা।
গবেষণার প্রধান, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’য়ের মনোবিজ্ঞানী আলিয়া ক্রাম বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা যায়, যারা তাদের বয়সি অন্যান্য ব্যক্তিদের তুলনায় নিজেকে অলস মনে করেন, তাদেরই মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। আর সেই অকাল মৃত্যুর সঙ্গে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক থাকে না।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যায়ামগারে গিয়ে ব্যায়াম করা কিংবা ঘটা করে হাঁটা বা দৌড়ানোকেই মানুষ সাধারণ শরীরচর্চা হিসেবে গন্য করেন। কিন্তু আমাদের গবেষণা প্রাত্যহিক কাজগুলোও শরীরচর্চা হতে পারে। আর দৈনন্দিন কাজগুলো করার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো সেগুলোকে শরীরচর্চা মনে করে করা। সুস্থ থাকতে হলে শুধু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়লেই হবে না, চিন্তাধারাও স্বাস্থ্যকর হতে হবে।”
দুষিত স্থানে ঘাম ঝরানো: ঘরের বাইরে ব্যায়াম করা সবচাইতে উপকারী। কিন্তু যানবাহনে কালো ধোয়া, ধুলাবালি ইত্যাদির কারণে ঘরের বাইরের বাতাসে দূষণের মাত্রা বেশি। এই দূষিত উপাদান নানান রোগের মূখ্য উপাদান। এদের কারণে অসংখ্য মানুষের গড় আয়ু কমছে প্রতিনিয়ত।
‘কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত জরীপ অনুযায়ী, “বিশ্বব্যাপি ৪৩ শতাংশ হৃদরোগজনীত মৃত্যুর পেছনে দায়ী বায়ুদূষণ।”
যারা শহর অঞ্চলে বসবাস করেন তাদের এই ঝুঁকি বেশি। দীর্ঘমেয়াদি বায়ুদূষনের কারণে অল্প বয়সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি হারানো এবং ‘ডিমেনশিয়া’ রোগের জন্যও বায়ুদূষণকে অনেকাংশে দায়ি করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ব্যায়ামের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বেছে নেওয়া জরুরি।
শক্তি নয়, ক্ষমতা বাড়ানোয় মনযোগ দিন: শক্তি আর ক্ষমতা এই দুটি শব্দকে সমার্থক মনে হলেও শরীরচর্চার ক্ষেত্রে তা ভিন্ন।
একজন মানুষ কতটা ওজন তুলতে পারেন তা দিয়ে তার শক্তি মাপা যায়।
তবে ওই একই ওজন কতটা দ্রুত একজন মানুষ তুলতে পারেন তা দিয়ে প্রকাশ পায় তার ক্ষমতা।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে শক্তি বাড়ানো নয় বরং ক্ষমতা বাড়ানো প্রশিক্ষণই হওয়া উচিত মুখ্য বিষয়।
রিও ডি জেনেরিও’র ‘এক্সারসাইজ মেডিসিন ক্লিনিক-ক্লিনিমেক্স’য়ের অধ্যাপক এবং ‘রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন’ বিভাগের পরিচালক ক্লডিও গিল আরাজো বলেন, “বৃদ্ধ বয়সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো কিংবা বলে লাথি মারতে পারা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির পেশির ক্ষমতার ওপর, শক্তির ওপর নয়। কিন্তু অধিকাংশ ব্যায়ামের উদ্দেশ্য হয় শক্তি বাড়ানো। এখানেই ‘পাওয়ার ট্রেইনিং’ আর ‘স্ট্রেংথ ট্রেইনিং’য়ের মধ্যে পার্থক্য।”
‘স্ট্রেংথ ট্রেইনিং’য়ে কতটুকু ওজন তুলতে পারেন তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে মানুষ। কিন্তু ‘পাওয়ার ট্রেইনিং’য়ে থাকে ওজন আর গতির মিশ্রন।”
Discussion about this post