ডা. মো. ফারুক হোসেন
লিউকোপ্লাকিয়া একটি ক্যান্সারপূর্ব রোগ, যা জিহ্বার ওপর বা গালের অভ্যন্তরে দেখা যায় অনবরত প্রদাহজনিত কারণে। লিউকোপ্লাকিয়া রোগে মুখের অভ্যন্তরে বা গালের মিউকাস মেমব্রেনে সাদা দাগের সৃষ্টি হয়। লিউকোপ্লাকিয়া রোগের নিশ্চিত কারণ এখনো জানা যায়নি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, লিউকোপ্লাকিয়া ধূমপান অথবা দীর্ঘমেয়াদি মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে।
মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন- (ক) মুখের অভ্যন্তরে ধারালো দাঁতের অংশবিশেষ দীর্ঘদিন বিদ্যমান থাকলে। (খ) কৃত্রিম দাঁতের অমসৃণ অংশবিশেষ। (গ) ফিলিং বা ক্রাউনের অমসৃণ অংশবিশেষ। (ঘ) ধূমপান ও অন্যান্য তামাক সেবনের কারণে। সেক্ষেত্রে এটিকে স্মোকারস্ কেরাটোসিস বলা হয়। (ঙ) দীর্ঘদিন পাইপ দিয়ে ধূমপান বা হিরোইন সেবন করলে। (চ) ঠোঁটের ওপর ক্রমাগত সূর্যের আলো পড়লে।
হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত বেশি দেখা যায় না। এটি দেখা যায় এইচআইভি পজেটিভ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ। যাদের রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করছে না, তাদের ক্ষেত্রেই হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া দেখা যেতে পারে। হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া এপস্টেন বার ভাইরাস দ্বারাও হতে পারে। তবে হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়াতে ক্যান্সারের কোনো ঝুঁকি থাকে না।
লিউকোপ্লাকিয়ার স্থান : (ক) অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিহ্বার পাশে বা ওপরে। (খ) গালের অভ্যন্তরে দু’পাশে হতে পারে। (গ) মহিলাদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও যৌনাঙ্গের বহির্ভাগে লিউকোপ্লাকিয়া দেখা যেতে পারে। তবে এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি।
লিউকোপ্লাকিয়ার রং : সাধারণত লিউকোপ্লাকিয়া আক্রান্ত স্থানের রং সাদা বা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে লাল বর্ণেরও হতে পারে, তখন একে ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া বলা হয়।
লিউকোপ্লাকিয়ার জটিলতা : (ক) ক্রমাগত অস্বস্তিকর অবস্থা, (খ) সংক্রমণস্থলের অবনতি ও (গ) ওরাল ক্যান্সার।
লিউকোপ্লাকিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা : লিউকোপ্লাকিয়ার সাদা দাগ ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। এতে সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। লিউকোপ্লাকিয়ার সংক্রমণ স্থান ধীরে ধীরে অমসৃণ হতে থাকে এবং স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। মসলাযুক্ত খাবার বা ঝাল খাবার খেলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। লিউকোপ্লাকিয়া নিশ্চিত করতে হলে বায়োপ্সি বা টিস্যু পরীক্ষা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে ওরাল ক্যান্সার হলো কিনা তাও নির্ণয় করা যায়।
লিউকোপ্লাকিয়ার চিকিৎসা : লিউকোপ্লাকিয়া রোগের চিকিৎসার আগে যেসব কারণে লিউকোপ্লাকিয়া হতে পারে সেগুলো বর্জন করতে হবে। ধূমপান, পান-সুপারি, অ্যালকোহল সেবন বর্জন করতে হবে। ক্রমাগত প্রদাহজণিত কোনো কারণ যদি থাকে যেমন ধারালো দাঁতের অংশবিশেষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করতে হবে। লিউকোপ্লাকিয়ার সংক্রমণ স্থান সার্জিক্যালি অপসারণ করা জরুরি হতে পারে। সাধারণত লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ স্থান সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘ঊ’ লিউকোপ্লাকিয়ার সংক্রমণ স্থানকে সংকুচিত করে। লিউকোপ্লাকিয়ায় প্রদাহ থাকলে আক্রান্ত স্থানে স্থানীয়ভাবে প্রয়োগকারী অয়েন্টমেন্ট প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার রাখার জন্য হালকা গরম লবন পানি অথবা বিশেষ মাউথওয়াশ দিনে দু’বার ব্যবহার করতে হবে। লিউকোপ্লাকিয়ার কারণ অনুযায়ী চিকিৎসার পাশপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় ওষুধ কার্যকর ভূমিকা রাখে। যেহেতু লিউকোপ্লাকিয়া মাঝে মাঝে ক্যান্সারের দিকে পরিবর্তিত হয়ে থাকে, সেহেতু লিউকোপ্লাকিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবার আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
Discussion about this post