হার্টবিট ডেস্ক
দেশে প্রতি বছর ডায়রিয়ায় প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে আবার চলতি বছর (২০২২ সাল) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ মানুষ দূষিত উৎস থেকে পানি পান করে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সেমিনারে এ কথা জানায় ‘ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ’ নামের একটি সংগঠন।
‘বাংলাদেশের বর্তমান জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়।
সংগঠনটি বলছে, গত বছরের (২০২১ সাল) ২৬ মার্চ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) গিয়েছিলেন ৬০০ জন। কিন্তু চলতি বছরের এই সময়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ জনে।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ’র সদস্য ডা. গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংজ্ঞা দিয়েছে এইভাবে, ‘স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক মঙ্গলজনক অবস্থা, যা নিছক রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়। সেই স্বার্থে স্বাস্থ্য একটি মৌলিক অধিকার।’
এসময় ডা. গোলাম রাব্বানী প্রশ্ন রেখে বলেন, আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা কি বলতে পারি দেশের নাগরিকরা এই সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকে উপভোগ করতে পারছি? মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার সঙ্গে শারীরিকভাবেও কি আমরা সুস্থ?
তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে ৬৪ লাখ মানুষ শুধুমাত্র ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদির চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়িত জীবন এবং স্বাস্থ্য- এই তিনটিই জনস্বাস্থ্যের মৌলিক উপাদান, যা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়।
দেশের যে কোনো উন্নয়নের জন্য পরিবেশের প্রধান উপাদান, যেমন- বায়ু, পানি ও মাটি বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে জানান গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন, কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মুনাফার আকাঙ্ক্ষায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারণে বাংলাদেশ আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন।
প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হিসেবে সংগঠনটি নিরাপদ পানি সংকট, অনিরাপদ খাদ্য, সংক্রামক ব্যাধি, করোনা পরিস্থিতি, পুষ্টি সমস্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, পানি-বায়ু-শব্দ দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পয়-নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করছে।
নিরাপদ পানি সংকটের কথা উল্লেখ করে ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, এই বছরের ২৬ মার্চ প্রায় এক হাজার ২০০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হয়েছেন। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০০ জনে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে, হাসপাতালটিতে একদিনে ৭৫০ জনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই বছর হাসপাতালটি ১৩ মার্চ থেকে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে ৪১ শতাংশেরও বেশি মানুষ উৎস থেকেই দূষিত পানি পান করে থাকে বলে জানান ডা. গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ পরিবারের মধ্যে দুটি, অর্থাৎ জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ, রোগ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা দূষিত উৎস থেকে পানি পান করে। এছাড়া জীবাণু ও দূষণসহ পানি পান করা লোকের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।
ইউনিসেফের বরাতে ডা. রাব্বানী বলেন, ৮৩ শতাংশ শহুরে আর ৭২ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাঙ্গণেই উন্নত পানির ব্যবস্থা আছে।
বায়ু দূষণের প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, বায়ু দূষণের ফলে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি হয়। একই কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৭০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে।
সেমিনারে বক্তার বলেন, গ্রাম পর্যায়ে সেবা পৌঁছানোর জন্য পুরো স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে। মানুষ যেন সহজে স্বাস্থ্যসেবা পায়। এছাড়া জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি না হলে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ, ডা. ফয়জুল হাকিম লালা, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতারসহ সংগঠনটির সদস্যরা।
Discussion about this post