ফাহমিদা হাশেম
‘মাছে–ভাতে বাঙালি’ কথাটি মাছের প্রতি আমাদের আকর্ষণ, প্রয়োজনীয়তা ও নির্ভরতার কথাই জানান দেয়। মাছ শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়; মাছ চর্বিহীন, কম ক্যালরিসম্পন্ন আদর্শ প্রোটিনের একটি ভালো উৎসও। মিঠাপানি ও লোনা পানি উভয় ধরনের মাছই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন।
মিঠাপানির মাছে সামুদ্রিক মাছের চেয়ে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। এসব পুষ্টি উপাদান হাড়, মস্তিষ্ক, দৃষ্টিশক্তি ও হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম দেহের ইমিউন কোষের সংকেত বহনে সাহায্য করে।
মিঠাপানির মাছের তেল বিভিন্ন অটো-ইমিউন রোগ যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইট্রিস, সোরিয়াসিসের তীব্রতা কমায়, শিশুদের টাইপ–১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এ ধরনের মাছে থাকে হিম আয়রন, যা দেহে খুব সহজে শোষণ হয়। এ ছাড়া মিঠাপানির মাছ বি ভিটামিন যেমন থিয়ামিন, নিয়াসিন, বি৬, বি১২, জিংক, সেলেনিয়ামের ভালো উৎস।
ভিটামিন ‘এ’ দেহের ত্বক ও টিস্যুকে সংক্রমণমুক্ত রাখে, তাই একে ‘অ্যান্টিইনফ্লেমেশন ভিটামিন’ বলা হয়। মিঠাপানির তৈলাক্ত মাছ ও ছোট মাছ, বিশেষ করে মলা ও ঢ্যালা (মাথাসহ) ভিটামিন ‘এ’–এর ভালো উৎস। তবে যাঁদের বাত ও অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁদের মাছের মাথা, কাঁটা খাওয়া উচিত নয়। আর রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে মাছের ডিম না খাওয়াই ভালো।
সপ্তাহে অন্তত তিন দিন খাদ্যতালিকায় মিঠাপানির ছোট-বড় মাছ রাখা উচিত। মাছ রান্না করার ক্ষেত্রে ডুবোতেলে ভাজার কারণে ভালো ফ্যাটের পরিমাণ কমে যায় ও ক্ষতিকারক ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই এ পদ্ধতি এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
অন্যদিকে সামুদ্রিক মাছ উপকারী চর্বি, ভিটামিন ডি ও আয়োডিনের চমৎকার উৎস, যা দেহের হাড়, মস্তিষ্ক ও থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সুস্থতায় অত্যন্ত কার্যকর। কড লিভার অয়েল ভিটামিন ডি–এর ভালো উৎস।
আরও আছে হৃদ্বান্ধব ফ্যাট ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে দুদিন সামুদ্রিক মাছ খায়, তাদের হৃদ্রোগের আশঙ্কা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এ ছাড়া ওমেগা ৩ বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন মানসিক রোগের জন্য বেশ কার্যকর।
ফাহমিদা হাশেম ,জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
Discussion about this post