ইতি খন্দকার
শুরু হয়ে যাচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আত্মশুদ্ধির এই মাসে আমরা অনেকেই যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত থাকি তা হচ্ছে ইফতার ও সাহরিতে খাদ্যতালিকায় কোন কোন খাদ্য রাখলে সুস্থভাবে সারা মাস রোজা রাখা যাবে। অধিকাংশ সময় ইফতারের খাবারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে দিন শেষে আমরা অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যাই। তাই সাহরিতে ভারসাম্যপূর্ণ সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যকর, পরিকল্পিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এবার রোজা যেহেতু গরমে হচ্ছে—বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এতে সারা দিন রোজা রাখার পর যে দুর্বলতা, অসুস্থতা ও অতিরিক্ত ক্লান্তির অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
- বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স পানি: ঘুম থেকে উঠেই স্বাভাবিক এক গ্লাস ডিটক্স ওয়াটার খাবেন। সেটা হতে পারে মধু, পানি, শসা, লেবু, পুদিনাপাতা, আদা, দারুচিনি মিশ্রিত পানি। হতে পারে পানির সঙ্গে তোকমা বা ইসবগুল অথবা চিয়া সিডস ইত্যাদি মিশ্রিত একটি ডিটক্স পানি।
- শর্করাসমৃদ্ধ খাবার : সাহরিতে এমন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, যা হজম হতে সময় লাগে এবং দীর্ঘক্ষণ কর্মশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে সাহরির খাদ্যতালিকায় শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কারণ জটিল শর্করাজাতীয় খাবার ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং দেহে শক্তি জোগায়। ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, আলু, চিড়া, ওটস, সিরিয়াল, বার্লি, লাল আটার রুটি ইত্যাদি রাখতে পারেন। তবে রোগভেদে খাবারের তালিকা ভিন্ন হতে পারে।
- প্রোটিনজাতীয় খাবার: সাহরিতে আমিষ বা প্রোটিনজাতীয় খাবার থাকলে তা দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সারা দিন শরীরে শক্তি জোগাবে। মাছ, মুরগির মাংস, কবুতরের মাংস, কোয়েলের মাংস, তরল দুধ, গুঁড়ো দুধ, দুধজাতীয় খাবার, ডিম, ডাল, সয়াবড়ি ইত্যাদি খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস। এসব খাবারে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি পুষ্টির উপাদানও প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা হাড়ের সুস্থতার জন্য জরুরি।
- খাদ্যতালিকায় আঁশ ও পানিযুক্ত ফল, তাজা সবজি রাখতে হবে, যেমন ডাঁটা, পটোল, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, মিষ্টি আলু, বেগুন, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, বিভিন্ন জাতের সবুজ শাক, কচু, টমেটো, কলা, আম, কাঁঠাল, খেজুর ইত্যাদি।
সাহরিতে যে খাবারগুলো
এড়িয়ে চলবেন
- ভাজাপোড়া, বেশি তেল ও মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে না। তরকারিতে ঝোল রাখতে হবে, বেশি ঝাল দেওয়া যাবে না। চেষ্টা করবেন কম ঝাল দিয়ে ভর্তাজাতীয় কিছু খাদ্যতালিকায় রাখতে। পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারিজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে সাহরিতে।
- টকজাতীয় ফল সাহরিতে খাওয়া যাবে না। এ ধরনের ফলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে।
- অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। তাতে পানিশূন্যতা বাড়তে পারে।
- সাহরির পর অনেকেই চা, কফি বা কোমল পানীয় খেয়ে থাকেন। এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবারে ক্যাফেইন থাকে, যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি তৃষ্ণা পায়।
পরামর্শ
- সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে বলে অনেকেই সাহরিতে বেশি খান। সাহরিতে বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। অতিরিক্ত খেলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে, পাকস্থলীতে অতিরিক্ত চাপ পড়বে। তাই পরিমাণমতো খাবার ও পানি পান করতে হবে।
- সাহরি খাওয়ার শেষে খেজুর, ভেজানো চিড়া বা সাগুদানা কিংবা তোকমা, গুড় অথবা মধু, কলা, তরল দুধ কিংবা গুঁড়ো দুধ ইত্যাদি দিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন।
- সাহরি খাওয়ার পর পর শুয়ে পড়া যাবে না। খাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
- সাহরি খাওয়ার পর অনেকেই একবারে অনেক গ্লাস পানি পান করেন। এটি করা যাবে না। বিরতি দিয়ে দিয়ে একটু একটু করে পানি পান করতে হবে পুরো সাহরির সময়টাতে।
- রান্না করা খাদ্য শক্ত, আধা সেদ্ধ বা কষানো যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রান্না হতে হবে ঝোল ঝোল, পুরোপুরি সেদ্ধ, কম মসলাসমৃদ্ধ।
- অনেকের সাহরির পর নামাজ আদায় করে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমের অভ্যাস আছে। এর ফলে শরীর আরও বেশি ক্লান্ত, অসুস্থ ও দুর্বল হতে পারে। তাই বেলা করে ঘুমানো যাবে না এ সময়।
লেখক: পুষ্টিবিদ
Discussion about this post