অধ্যাপক লায়লা শিরিন
কিছু কিছু ক্যানসার পূর্ণ রোগ হিসেবে দেখা দেওয়ার আগেই নানাভাবে প্রকাশ পেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এগুলোকে বলে প্রি-ক্যানসারাস কন্ডিশন, মানে ক্যানসার-পূর্ববর্তী অবস্থা। যাঁদের এ ধরনের সমস্যা আছে, তাঁরা আগে থেকেই সতর্ক ও সচেতন হলে পূর্ণ ক্যানসার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
পায়ুপথে এমন বেশ কয়েকটি সমস্যা আছে, যা দেখা দিলে সতর্ক হওয়া উচিত। যেগুলো এখনো ক্যানসার নয়, বরং ক্যানসারের আগের অবস্থা এবং চিকিৎসা না করলে বা অপসারণ না করলে ভবিষ্যতে ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।
পলিপ বা মাংসের পিণ্ড
এটি আলগা মাংসের টুকরো, যা পায়ুপথের সঙ্গে লেগে থাকে। এটি পরীক্ষা করলে, এমনকি ক্যানসার-পূর্ববর্তী অবস্থায়ও অস্বাভাবিক কোষ থাকতে পারে। পায়ুপথে একটা অথবা অনেকগুলো পলিপ হতে পারে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। কিছু একটা পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে বলে মনে হয়, সঙ্গে রক্তপাত থাকে। এটি কিন্তু ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ নয়।
কিন্তু তরুণ বা ৪০-৫০-এর বেশি বয়সী কারও একই সমস্যা হলে এটি মারাত্মক হতে পারে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকে। বিশেষত কম বয়সে যাঁরা আসেন, তাঁদের শতাধিক ছোট ছোট পলিপ থাকে। এটা জিনগত ত্রুটির কারণে ও বংশগত কারণে হতে পারে । এটিকে ফ্যামিলিয়াল অ্যাডেনোম্যাটস পলিপসিস, সংক্ষেপে এফএপি বলে। বয়স্কদের কিন্তু কমসংখ্যক বা এক-দুটি পলিপ থাকে।
যা-ই হোক, জানা জরুরি যে এই পলিপ বা অ্যাডেনোমা একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, আর এগুলো থেকে ক্যানসার হতে পারে। এটিকে বলে অ্যাডেনোমা কার্সিনোমা সিকোয়েন্স।
পলিপ বা অ্যাডেনোমাটাস পলিপ নানা ধরনের হতে পারে। যেমন টিবিউলার অ্যাডিনোমা। এটি আঙুলের মতো হয়। পায়ুপথের সঙ্গে সরু নালির সাহায্যে ঝুলে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও বড়দের ক্ষেত্রে এটি অপসারণ করে পরীক্ষা করা উচিত।
ভিলাস অ্যাডিনোমা ফুলকপির মতো দেখতে। পায়ুপথের সঙ্গে বড় জায়গাজুড়ে লেগে থাকে। আগেরটার মতো চিকন নালির সাহায্যে নয়। এটি থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। একে শিকড়সহ স্বাভাবিক পায়ুপথের অংশসহ অপসারণ করা হয়।
লক্ষণ
কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। তবে কারও পাতলা পায়খানা, আমযুক্ত রক্তমিশ্রিত পায়খানা, মলের সঙ্গে রক্তপাত, পেটে মোচড় দেওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে। অনেক সময় কলোনস্কোপি করে দেখা যায়, এক বা একের অধিক পলিপ আছে।
পায়ুপথে আঙুলের সাহায্যে পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। পলিপ ছাড়াও আঙুলের মাথায় রক্তের চিহ্ন, আম ইত্যাদি দেখে বোঝা যায় সমস্যা আছে কি না।
যেহেতু অনেক সময় এই পলিপ উপসর্গহীন থাকতে পারে, তাই একটা বয়সের পর নিয়মিত কলোনস্কোপি করা উচিত, বিশেষ করে যাঁদের পারিবারিক ইতিহাস আছে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
যদি জটিল না হয় বা অন্য কোনো রোগের সঙ্গে না থাকে, তাহলে শুধু কোলোনস্কোপি করেই এটি অপসারণ করা যায়। কিন্তু যেহেতু এগুলো পারিবারিক এবং কিছু সিনড্রোমের সঙ্গে জড়িত, তাই পুরো শরীরের চেকআপ করা জরুরি। ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
অধ্যাপক লায়লা শিরিন, সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
Discussion about this post