কবীর হোসাইন
আরটি-পিসিআর করোনাকালের বহুল পরিচিত একটি পরিভাষা। মূলত কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা এটি। সবেচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাপদ্ধতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়।
আরটি-পিসিআর নাম কীভাবে এল
পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে দেহের ভেতরে ডিএনএ থেকে আরএনএ তৈরি করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ট্রান্সক্রিপশন। আবার এর বিপরীত ঘটনাও ঘটানো সম্ভব। অর্থাৎ আরএনএ থেকে ডিএনএ তৈরি করা—যাকে বলা হয় রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন। আরটি-পিসিআরের প্রথম অংশ আরটি রিভার্স ট্রান্সক্রিপশনের সংক্ষিপ্ত রূপ।
পিসিআরের পূর্ণরূপ—পলিমারেজ চেইন রি–অ্যাকশন। এই পলিমারেজ এনজাইম ডিএনএ থেকে আরও ডিএনএর প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। আর এটি প্রতিনিয়ত দেহের ভেতরে প্রতিলিপি বানিয়েই চলেছে। পিসিআর মেশিনের সাহায্যে একটি ডিএনএ থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি—এভাবে আনুপাতিক হারে অণুর সংখ্যা লাখো কোটি গুণ বাড়ানো যায়। সংখ্যা বাড়ানোর এই প্রক্রিয়াকেই বলে পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন বা পিসিআর।
কীভাবে কাজ করে আরটি-পিসিআর
করোনা পরীক্ষা করাতে গেলেই আমরা দেখি, একটি লম্বা দণ্ড গলা বা নাকের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই দণ্ডের মাথায় সাধারণত নরম তুলা থাকে। এটি দিয়ে মূলত পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
কোভিড ১৯-এর দেহে ডিএনএ নয়, জিন বস্তু হিসেবে থাকে আরএনএ। ফলে পরীক্ষাগারে আনার পর প্রথম কাজটিই হয় ভাইরাসটির আরএনএ আলাদা করে ফেলা। এরপর শুরু হয় রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় আলাদা করা আরএনএকে ডিএনএতে রূপান্তর করা হয়। অতঃপর পলিমারেজ চেইন রি–অ্যাকশন প্রক্রিয়ায় এই রূপান্তরিত ডিএনএর সংখ্যা এমনভাবে বাড়ানো হয়, যাতে শনাক্তকারী যন্ত্র তা শনাক্ত করতে পারে।
পজিটিভ-নেগেটিভ মাপকাঠি
কী পরিমাণ ডিএনএ তৈরি হলে বা কত সাইকেল তথা চক্রাকারের পর বোঝা যাবে নমুনা প্রদানকারী ব্যক্তি কোভিড-১৯ পজিটিভ কি না? এ জন্য গবেষকেরা একটি সাধারণ মাপকাঠি স্থির করেছেন। যাকে বলা হয় ‘সাইকেল থ্রেশহোল্ড ভ্যালু’ বা সিটি মান।
সাধারণত পলিমারেজ চেন রি–অ্যাকশনের ৩৫ চক্রের মধ্যেই কোভিড–১৯-এর জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়লে নমুনা প্রদানকারী কোভিড পজিটিভ বলে চিকিৎসকেরা ধরে নেন।
আর ৩৫ সাইকেলের পরও যদি জীবাণু না মেলে তাহলে চিকিৎসকেরা ধরে নেন তিনি কোভিড নেগেটিভ।
Discussion about this post