অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
প্রতিবছর বাংলাদেশে কতজন মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, এর কোনো সুনির্দিষ্ট জরিপ নেই। মাথায় আঘাত বা হেড ইনজুরির প্রধান কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এ ছাড়া গাছ বা দালান থেকে পড়ে যাওয়া, মারামারিতে, খেলাধুলার সময়, শক্ত স্থানে বা বাথরুমে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষ মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন।
মাথায় আঘাত লাগার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মস্তিষ্কে আঘাত। মস্তিষ্ক শক্ত খুলির মধ্যে নিরাপদে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, খুলির হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু মস্তিষ্ক অক্ষত আছে। আবার অনেক সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাঁধা, সরে যাওয়ার মতো বিপদ ঘটে।
সরাসরি আঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, যেমন রক্তক্ষরণ হলে তাকে বলে প্রাইমারি ব্রেইন ইনজুরি। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাথায় আঘাতের জন্য পরবর্তী সময়ে কিছু পরিবর্তন বা ক্ষতিসাধন হতে দেখা যায়। যেমন মস্তিষ্কের কোনো অংশ নিচের দিকে নেমে বা ঝুলে পড়ে (হার্নিয়েশন) বা চারপাশে পানি জমে ফুলে ওঠে। একে বলে সেকেন্ডারি ইনজুরি।
তবে কার কোন ধরনের ইনজুরি হয়েছে, তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। তাই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। আঘাতের বর্ণনা, ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা থেকে অনেকটা ধারণা মেলে। তবে রক্তক্ষরণ কতটা হয়েছে বা হয়েছে কি না, তা দেখতে মাথার সিটি স্ক্যান সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ঘাড়ের আঘাত দেখার জন্য সারভাইক্যাল স্পাইনের এক্স-রে দরকার হবে। কারণ, ঘাড়ের মেরুদণ্ডের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে, মৃত্যুও হতে পারে।
মাথায় আঘাতের পর রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত বা পানি আসা, কান দিয়ে রক্ত বা পানি আসা ইত্যাদি হলো গুরুতর আঘাতের লক্ষণ। দুর্ঘটনাজনিত কারণে মাথা বা ঘাড়ে আঘাত পেলে যথাসম্ভব মাথা-ঘাড় না নড়িয়ে সোজা করে শুইয়ে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। নিউরোসার্জারি করার সুবিধা আছে বা নিউরোকেয়ার ইউনিট আছে, এমন হাসপাতালে নেওয়া উত্তম।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
Discussion about this post