ডা. জাহেদ পারভেজ
ইদানীং পিআরপি চিকিৎসার কথা অনেক শোনা যায়। এই পিআরপি কী, আর কেনই–বা ব্যবহৃত হয়? পিআরপি হলো প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা, যা রক্তের বিশেষ প্রক্রিয়াজাত অংশবিশেষ। বলা হয়, এতে যেসব উপাদান থাকে, তা নতুন কোষ তৈরির পাশাপাশি পুরোনো কোষগুলোকে উজ্জীবিত করে এবং এরই ভিত্তিতে এটি মানবদেহের বিভিন্ন অংশের, যেমন ত্বক, চুল, অস্থিসন্ধি, মাংসপেশির আঘাত, টেন্ডনের আঘাত, পুরোনো ক্ষতের চিকিৎসায় উপকার করে থাকে।
পিআরপি থেরাপির ফলাফল
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পিআরপি থেরাপি ব্যবহার করা যায়। যেমন ব্রণের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত, লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া, চোখের নিচের কালো দাগ, অল্প বয়সে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো ইত্যাদি।
চুলের চিকিৎসায়ও পিআরপি থেরাপির সাফল্য আছে। সাধারণ চুল পড়া, জায়গায় জায়গায় চুল পড়া, সর্বোপরি বংশগত চুল পড়ার ক্ষেত্রে পিআরপি থেরাপিতে উপকার আসে।
যেভাবে দেওয়া হয়
পিআরপি দেওয়ার আগে নির্দিষ্ট স্থান বিশেষ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর জায়গাটি স্থানীয়ভাবে অবশকারী ক্রিম বা ইনজেকশন দিয়ে সাময়িকভাবে অবশ করা হয়, যা ৩০-৪০ মিনিট কার্যকর থাকে। রোগীর কনুইয়ের ভাঁজের রক্তনালি থেকে ২০ মিলি রক্ত নিয়ে একটি বিশেষায়িত মেশিনে দিয়ে ১০ থেকে ১২ মিনিট উচ্চ মাত্রায় ঘোরানো হয়। এতে টেস্টটিউবের ভেতর ৩টি সুনির্দিষ্ট স্তর তৈরি হয়। এর মধ্যে ওপরের হলুদ রঙের অংশটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে ইনসুলিন সিরিঞ্জে তোলা হয়, এটিই পিআরপি। এই পিআরপি থেরাপি নির্দিষ্ট স্থানে ইনসুলিন সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। থেরাপি নেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে রোগী বাসায় যেতে পারেন ও স্বাভাবিক সব ধরনের কাজকর্ম করতে পারেন।
সাধারণত প্রতি মাসে ১ বার করে, ৮ থেকে ১২ মাস ধরে থেরাপি দেওয়া হয় ও থেরাপি শুরুর ৩ মাস পর থেকেই রোগীর অবস্থার পরিবর্তন ও উন্নতি বুঝতে পারেন। রোগের অবস্থান, রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে ফলাফল নির্ভর করে। ভালো ফলাফলের জন্য অনেক সময় থেরাপির পাশাপাশি ওষুধ খাওয়া ও ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে ইনজেকশনের প্রয়োগের স্থানে ব্যথা, মাথার ত্বকে সংক্রমণ, নার্ভ ড্যামেজ, চুলকানি ইত্যাদি। তবে এ সবই সাময়িক। পিআরপি থেরাপি নেওয়ার পর ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম সেঁক নেওয়া যাবে না। অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
যাঁরা নেবেন না
যাঁদের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা কম, যাঁদের রক্তে ফিব্রিনোজেন কম, যাঁদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সংক্রমণের উপস্থিতি আছে, যাঁরা রক্তরোগ বা ক্যানসারের রোগী, দীর্ঘমেয়াদি লিভারের রোগী, যাঁরা অ্যান্টিকোয়াগুলেসন থেরাপিতে আছেন।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্মরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
Discussion about this post