হার্টবিট ডেস্ক
চিকিৎসা সেবায় সংশ্লিষ্টদের গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা দিতে পারি, আমরা যেন কারও মুখাপেক্ষী না থাকি, আমরা যেন নিজেরাই সবকিছু করতে পারি, সেভাবে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার (২৯মার্চ) সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনস অব বাংলাদেশের ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ‘প্লাস্টিকন-২০২২’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রান্তে যুক্ত ছিলেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশে প্লাস্টিক সার্জারির যাত্রার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. আর জে গার্স্টকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর তারই অনুরোধে ভারতীয় প্লাস্টিক সার্জন ডা. পি বেজলিলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেন। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে তা অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা আজ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসকদের আমলে চিকিৎসা শাস্ত্রের তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় থেকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানুষের কী প্রয়োজন, কী করতে হবে— এসব দিকে খুব একটা নজর দেয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এলে আমরা বিশেষ পদক্ষেপ নেই।
১৯৯৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট দেশের সর্বপ্রথম বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সামন্ত লাল সেনসহ অনেকের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট তৈরি হয়েছে, এটি সত্যিই আনন্দের বিষয়।
যেহেতু আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার কিন্তু শেষ নেই। আমাদেরও খুব আধুনিকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। যাই হোক, আমরা এখন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট করেছি। সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন চিকিৎসা নেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত ইনস্টিটিউটে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মাস্টার্স রেসিডেন্সি কোর্স চালু করেছি। এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সময়ে ও একটি সুসংবদ্ধ পাঠক্রম অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে এমএস ও এফসিপিএস কোর্স চালু আছে এবং বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নিয়মিত দক্ষ জনবল তৈরি করে যাচ্ছে।
সারাদেশের বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ বিষয়ের বিশেষায়িত সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। এই দেশে মানুষের চিকিৎসা, শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে আরও উন্নত হোক, সেটাই আমরা চাই। আপনারা জানেন, আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণার ওপরে আমি জোর দিয়েছি। এই গবেষণার জন্য আমরা বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
সবাইকে গবেষণার মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেন উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা দিতে পারি। আমরা যেন কারও মুখাপেক্ষী না থাকি, নিজেরাই যেন করতে পারি, সেভাবে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি এই এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষের সেবা পাওয়ার আরও সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম আরও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
পরে সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনস অব বাংলাদেশ আয়োজিত প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘প্লাস্টিকন ২০২২’ এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থাপিত ‘মুজিব কর্নার’র শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Discussion about this post