কবীর হোসাইন
অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে রোগের লক্ষণ ও ধরন বুঝে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকেন। সেই ব্যবস্থাপত্রে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি একটি পরীক্ষার নাম প্রায়ই দেখা যায়। এমনকি কখনো কখনো তালিকার শুরুতেই থাকে। সেটি হলো, সিবিসি, মানে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট।
সিবিসি কী?
সিবিসি একটি সামগ্রিক রক্ত পরীক্ষা। চিকিৎসকেরা এর মাধ্যমে একটি সাধারণ ধারণা পেয়ে থাকেন। রোগীর শরীর কোনো সংক্রমণের শিকার হয়েছে কি না, রক্তকণিকা স্বাভাবিক আছে কি না, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন; প্রভৃতি বুঝতে এই পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ।
সিবিসি পরীক্ষার ধ্রুবক
এই পরীক্ষা রক্তের বিভিন্ন উপাদান ও বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে একটি সার্বিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে। উপাদান ও বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- লোহিত রক্তকণিকা: এটি ফুসফুস থেকে দেহের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহনের কাজ করে থাকে।
- শ্বেত রক্তকণিকা: এটি জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হিমোগ্লোবিন: রক্তের লোহিত কণিকার এই প্রোটিনই অক্সিজেন বহন করে। রক্তের বর্ণের জন্যও দায়ী এটি।
- প্লাটিলেটস: এটি রক্তপাত বন্ধ করতে ও রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।
- হেমাটোক্রিট: রক্তের কতটা অংশজুড়ে লোহিত কণিকা রয়েছে, তারই অনুপাত প্রকাশ করে এটি।
সিবিসি পরীক্ষার ফলাফল
কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল দেখে চিকিৎসক রোগীর রোগের ধরন সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পেতে পারেন। কোন ফলাফল কোন রোগগুলোকে নির্দেশ করে, তা দেখে নেওয়া যাক।
- রক্তে লোহিত কণিকার স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি মাইক্রোলিটারে ৩.৫ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন সেলস।
- হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম পার ডেসিলিটার (পুরুষের ক্ষেত্রে) এবং ১২.৫ থেকে ১৫.৫ গ্রাম পার ডেসিলিটার (নারীর ক্ষেত্রে)।
- হেমাটোক্রিট মাপা হয় শতাংশে। সাধারণত স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে ধরা হয় ৩৮.৩ থেকে ৪৮.৬ শতাংশ (পুরুষের ক্ষেত্রে)। ৩৫.৫ থেকে ৪৪.৯ শতাংশ (নারীর ক্ষেত্রে)।
- রক্তে শ্বেত কণিকার স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি মাইক্রোলিটারে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ ও নারীর ক্ষেত্রে ৪,৫০০ থেকে ১১,০০০।
- রক্তে লোহিত কণিকা, হিমোগ্লোবিন ও হেমাটোক্রিটের মাত্রা কম থাকলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হতে পারে। লিউকেমিয়া, অস্থিমজ্জার সমস্যা, দেহে অতিরিক্ত পানির উপস্থিতির মতো অসুস্থতা দেখা দেয়।
- আর এসবের মাত্রা বেশি থাকলে ধরা হয় পলিসাইথেনমিয়া। হৃদ্রোগ ও দেহের পানিশূন্যতার মতো সমস্যা হতে পারে।
- রক্তে শ্বেত কণিকার মাত্রায় অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দেহ জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। এইচআইভি সংক্রমণ, বোনম্যারো (অস্থিমজ্জা) সমস্যাসহ ক্যানসারের ঝুঁকিও তৈরি হয়।
Discussion about this post