হার্টবিট ডেস্ক
যেসব মায়েদের সন্তানরা অটিজমে আক্রান্ত, সেসব মায়েদের কাউন্সেলিং করলে তাদের বিষণ্নতা কমে বলে গবেষণায় দেখা গেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি)।
রবিবার (২৭ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি জানায়, স্বল্প খরচে স্কুলভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মায়েদের বিষণ্নতার অবস্থা পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। সম্প্রতি গবেষণাটি গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা মাথায় রেখে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়। ঢাকার অটিস্টিক শিশুদের জন্য পরিচালিত দুটি স্কুলে ‘ফিজিবিলিটি অফ ইমপ্লেমেন্টিং-এ ‘মেন্টাল হেলথ কেয়ার প্রোগ্রাম অ্যান্ড হোম-বেসড ট্রেনিং ফর মাদারস অব চিলড্রেন উইথ অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার ইন আরবান পপুলেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণা চলে।
তে প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআর,বি-এর হেলথ সিস্টেম অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ। তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্যানেলের সদস্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
ছয় মাসের জন্য পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মায়েরই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। আরও দেখা যায়, যেসব মায়েদের ৪০ শতাংশের বিষণ্নতা ছিল, কাউন্সেলিংয়ের পর তাদের ২৩ শতাংশের উন্নতি হয়েছে।
আনুমানিক চারটি সেশন নেওয়ার পর প্রায় অর্ধেক মায়ের মানসিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মানে সেই উন্নতি দেখা যায়।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মায়েরা শুধু শিশুকে লালন-পালনের চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করেন না। প্রতিনিয়ত সামাজিক বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং আরও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় জানিয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা এখনও অবহেলিত বিষয়। এই গবেষণা আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে প্রদান করা যেতে পারে, এবং কীভাবে একটি বিশেষায়িত সেবায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে সেবাটিকে কার্যকর করা যায়।
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে প্রধান গবেষক ড. আলিয়া নাহিদ বলেন ‘আমি আনন্দিত যে আমরা একটি সাশ্রয়ী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মডেল পেয়েছি, যা বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বড় পরিসরে প্রয়োগ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ দেশের যেখানেই অটিজম সেবার সুযোগ রয়েছে সেখানেই দ্রুত এই স্বাস্থ্যসেবা মডেলটি যুক্ত করার সুপারিশ করতে চাই। এ লক্ষ্যে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের কাজটি এখনই শুরু করা উচিত।’
আইসিডিডিআর,বি-র সায়েন্টিস্ট ও ইনিশিয়েটিভ ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস-এর প্রধান ড. আলিয়া নাহিদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন চিলড্রেন্স অ্যান্ড হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল (এইচএমএস), ইউএসএ, সূচনা ফাউন্ডেশন, ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল-এর সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
Discussion about this post