ডা. রবি বিশ্বাস
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিত্যদিনের একটি সমস্যা, বিশেষ করে শিশু যখন নিজে পায়খানা করতে শেখে, তখন এই জটিলতা দেখা দেয়। সাধারণত দুই থেকে তিন বছরের শিশুর মধ্যে এই সমস্য বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমানে সব বয়সের শিশুর মধে৵ এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
লক্ষণ
শিশু যদি সপ্তাহে অন্তত তিনবারের কম মলত্যাগ করে, মল যদি শক্ত হয় বা মোটা ধারায় বের হয়, মলের সঙ্গে কখনো রক্তপাত হয়, মল বড়ি বড়ি আকারের হয়, তবে এটিকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। এগুলো হলো, মলত্যাগ করতে ব্যথা পাওয়া, শৌচাগারে যেতে অনীহা, খাবারে রুচি কমে যাওয়া, বমিভাব ও পেটব্যথা। আর এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর যদি মাঝেমধ্যে প্যান্টে মল লেগে থাকে, তবে বুঝতে হবে শিশুটির কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে।
কারণ
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণগুলো হলো, আঁশজাতীয় পর্যাপ্ত খাবার (সবজি, টাটকা ফল) না খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাবার না খাওয়া, শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে পায়খানা করতে না শেখানো। এ ছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ (নতুন পরিবেশ, পরিবারে নতুন শিশুর আগমন, স্কুলে প্রথম ভর্তি হওয়ার কারণে), হরমোনের সমস্যা বা জন্মগত রোগের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
যেসব জটিলতা হতে পারে
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মলদ্বার ফেটে যেতে পারে এবং ক্ষত হয়ে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতও হতে পারে। দীর্ঘদিন নিয়মিত পায়খানা না করার কারণে মলত্যাগের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে অন্ত্রের জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ক্ষুধামান্দ্য থাকলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়, শিশুর ওজন বাড়ে না, এমনকি মানসিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়।
চিকিৎসা
জটিলতার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। প্রাথমিকভাবে পায়খানা নরম করার ওষুধ, পর্যাপ্ত আঁশজাতীয় খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যা অবশ্যই দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলতে হবে। যাদের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি বা উপসর্গ ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে।
প্রতিরোধব্যবস্থা
শিশুকে ছোটবেলা থেকে সঠিক খাবারে (শাকসবজি, টাটকা ফলমূল, ডাল) অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। যেসব খাবারে (গরুর দুধ, শুকনা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার) পায়খানা শক্ত হতে পারে, তা পরিহার করতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিতে হবে। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত ও সঠিকভাবে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পায়খানা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং কোনোভাবেই যাতে শিশু মানসিক চাপে না থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল
Discussion about this post