ডা. শুভার্থী কর
যখন দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায়, তখন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। আমাদের শরীরে প্রতি মুহূর্তে বিপাক কার্যক্রম চলমান। এতে তৈরি হয় প্রচুর বর্জ্য পদার্থ। প্রতিদিন এসব বর্জ্য শরীর থেকে বের করে থাকে কিডনি। এর সঙ্গে প্রস্রাব তৈরির মাধ্যমে শরীরে লবণ-পানির ভারসাম্য রক্ষায় ও রক্ত প্রস্তুতেও কিডনির রয়েছে ভূমিকা।
কিডনি বিকল হলে শরীরের এ ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দেয়। এতে শরীর ফোলা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, খিঁচুনি ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং ইউরিয়া-জাতীয় বর্জ্য শরীরে জমতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের পাঁচটি ধাপ আছে। শেষ ধাপে রোগীকে ডায়ালাইসিসের পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়ালাইসিস দুই ধরনের: হিমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।
হিমোডায়ালাইসিস
হিমোডায়ালাইসিস আমাদের দেশে বেশি প্রচলিত। এতে সপ্তাহে দুই-তিনবার ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। প্রতি সেশনে সাধারণত চার ঘণ্টা লাগে। এ সময়ে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি, বর্জ্য পদার্থ ডায়ালাইসিস যন্ত্রের দ্বারা নিষ্কাশন করা হয়।
বাঁ হাত সংরক্ষণ কী
হিমোডায়ালাইসিস সাধারণত বাঁ হাতের মাধ্যমে করা হয়। যাঁরা ডানহাতি, তাঁদের বাঁ হাতে এভি ফিস্টুলা অপারেশন করে ডায়ালাইসিসের পথ প্রস্তুত করতে হয়। চতুর্থ ধাপেই এটি করে ফেলার নিয়ম, যাতে পঞ্চম ধাপে প্রয়োজনীয় সময় ডায়ালাইসিস শুরু করা যায়। রক্ত পরীক্ষা করতে বা ইনজেকশন দিয়ে সেই শিরা বা রক্তনালিকে আগেই আঘাত করা হলে চতুর্থ ধাপে ফিস্টুলা করতে সমস্যা হয়। ফিস্টুলা তৈরির পর সেই হাতে ভারী কাজ করা যায় না। রক্ত পরীক্ষা বা অন্যান্য শিরায় সুই ফোটানো যায় না। তবে আঙুল থেকে রক্ত নিয়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষায় বাধা নেই।
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস
এর সুবিধা হলো বাড়িতে বসেই ডায়ালাইসিস করা যায়। যন্ত্রের দরকার হয় না। পেটের ভেতর ক্যাথেটার স্থাপন করে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ভরা হয়। পেরিটোনিয়াম নামের পর্দা ডায়ালাইসিসের কাজটি করে থাকে। এই বিশেষ তরল আমাদের দেশে প্রস্তুত হয় না বলে খরচ বেশি পড়ে। তা ছাড়া পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা না হলে সংক্রমণ হতে পারে।
ডায়ালাইসিস কি জীবনভর নিতে হয়
ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সারা জীবন ডায়ালাইসিস নিতে হবে। কিন্তু কখনো কখনো সাময়িক কিডনি বিকল রোগীদেরও ডায়ালাইসিস দিতে হয়। সাধারণত তাঁরা কয়েকটি সেশনের পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। সাময়িক রোগীদের ফিস্টুলার দরকার হয় না।
ডায়ালাইসিস রোগীর খাবারদাবার
অতিরিক্ত লবণ, ধূমপান-মদ্যপান ও চর্বি-জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। পুষ্টিবিদ প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা পথ্য প্রস্তুত করে দেবেন।
ডা. শুভার্থী কর, সহকারী অধ্যাপক, নেফ্রোলজি বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
Discussion about this post