লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা
পা জ্বালাপোড়া করা কোনো রোগ নয়, বরং অনেক রোগের লক্ষণ। সাধারণত প্রান্তীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুভূতির সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগে এটি হতে পারে। রক্তে উচ্চমাত্রার শর্করা থাকার কারণে এই জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগী। একে বলা হয় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি।
শুরুতে পা ঝিনঝিন করে, অনুভূতি শক্তি কমে যায়। কেউ কেউ বলে থাকেন পায়ের তলা বা পাতা মরিচের মতো জ্বলে। অনেক সময় সামান্য স্পর্শেই ভিন্ন ধরনের অনুভূতি হয়। প্রান্তীয় স্নায়ু যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এরা মস্তিষ্কে বারবার ব্যথার অনুভূতি পাঠাতে থাকে। ফলে কোনো ক্ষত না থাকলেও অনুভূত হতে থাকে জ্বালা বা ব্যথার। পায়ের ওপর কেউ কেউ কাঁথা-কাপড় পর্যন্ত রাখতে পারেন না। রাতে ঘুমানোর সময় পা উদোম রাখতে হয়।
সতর্কতা
নিউরোপ্যাথি তীব্র হলে ব্যথার অনুভূতি একেবারেই লোপ পেতে পারে। এমনকি স্যান্ডেল পা থেকে খুলে গেলেও টের পাওয়া যায় না। কোনো আঘাত পেলে রোগী তা বুঝতে পারেন না। এ রকম নীরব আঘাত থেকে তৈরি হয় ক্ষত, যা এক সময় রূপ নিতে পারে গ্যাংগ্রিনে। ডায়াবেটিস ছাড়াও আর যেসব কারণে নিউরোপ্যাথি হয়, এর মধ্যে ভিটামিন বি১২, থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড ঘাটতির পাশাপাশি ক্রনিক কিডনি রোগ, লিভারের অসুখ, থাইরয়েডসহ অন্য আরও হরমোনজনিত রোগ অন্যতম। অ্যালকোহল সেবন, রিউমাটয়েড বাত, এইডস, ক্যানসার, ভারী ধাতু দূষণসহ আরও কিছু কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে প্রান্তীয় স্নায়ু।
চিকিৎসা কী
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এমনটি হলে প্রথমেই নজর দিতে হবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিকে। খাদ্যাভ্যাসসহ যাপিত জীবনে আনতে হবে পরিবর্তন। ওষুধের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রদবদল করতে হবে। ধূমপান, মদপান, তামাক, জর্দা, গুলসহ ক্ষতিকারক দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিডসহ অন্যান্য ভিটামিনের জোগান থাকতে হবে খাদ্যতালিকায়। এর মধ্যে রয়েছে টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল। ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, যাতে পায়ে রক্ত চলাচল ভালো থাকে। নিয়মিত পায়ের যত্ন নিতে হবে।
Discussion about this post