ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
বাংলায় যাকে বহুলভাবে ভগন্দর বলা হয়, সেটিই ফিস্টুলা। মলদ্বারের ভেতরের সঙ্গে বাইরের নালি তৈরি হয় এ রোগ হলে। সাধারণত মলদ্বারের পাশের গ্রন্থি বন্ধ ও সংক্রমিত হয়ে ফোড়া হয় এবং ফোড়া ফেটে গিয়ে নালি তৈরি হয়। মলদ্বারে ফোড়া হওয়া রোগীদের ৫০ শতাংশের ফিস্টুলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া মলদ্বারের যক্ষ্মা, বৃহদন্ত্রের প্রদাহ ও মলদ্বারের ক্যানসার থেকেও ফিস্টুলা হতে পারে।
চিকিৎসা
অপারেশন ছাড়া এই রোগ সাধারণত ভালো হয় না। কিন্তু অনেকেই অপারেশনকে ভয় পেয়ে ‘বিনা অপারেশনে চিকিৎসা’ নামের হাতুড়ে চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে অনেক ক্ষতি করে ফেলেন। আর এই ভুলের কারণে আজীবনের জন্য অনেক রোগী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেকের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী
বিকল্প মলের রাস্তা কেলোস্টমি বানিয়ে দিতে হয়। এ রোগ যত জটিল হবে অপারেশনের সংখ্যা তত বেশি হবে।
চিকিৎসাপদ্ধতি
বর্তমানে ফিস্টুলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত অপারেশন পদ্ধতিগুলো হচ্ছে ফিস্টুলোটোমি, ফিস্টুলেকটোমি, সিটনপদ্ধতি, ফিস্টুলা প্লাগ, ফিব্রিন গ্লু, ফ্ল্যাপ ব্যবহার, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার, স্টেম সেল ব্যবহার, মলদ্বারের মাংসপেশির মাঝখানের নালি বন্ধ করে দেওয়া, এন্ডোস্কোপিক ফিস্টুলা সার্জারি।
প্রচলিত চিকিৎসা
অপারেশন: এটিই ফিস্টুলার উত্তম চিকিৎসাপদ্ধতি। সমগ্র বিশ্বে এ পদ্ধতি প্রচলিত।
লেজার চিকিৎসা: খুব ছোট ও সহজ ফিস্টুলা হলে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
এ পদ্ধতির ওপর ভালো কোনো গবেষণা নেই। জটিল ফিস্টুলার চিকিৎসা এ পদ্ধতিতে করলে আবারও হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সিটনপদ্ধতি: জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে দুই-তিন ধাপে অপারেশন করা হয়। প্রতিটি ধাপের মাঝে ৭ থেকে ১০ দিন বিরতি দেওয়া হয়। সাধারণত কোমরের নিচ থেকে অবশ করে অপারেশন করা হয়। এক-দুই দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। ফিস্টুলা অপারেশনের পর ঘা শুকাতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
অপারেশনের পরে
অপারেশনের পর নিয়মিত ড্রেসিং করা প্রয়োজন। এটি পুনরায় ফিস্টুলা হওয়ার আশঙ্কা কমায়। ফিস্টুলা অপারেশনের পরও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপারেশনের পর পুনরায় ফিস্টুলা হওয়ার আশঙ্কা ৩ থেকে ৭ শতাংশ। জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে এটি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে ফিস্টুলা অপারেশনের পর আবার হবে কি না, তা বলা কঠিন। ফিস্টুলার ধরন, সার্জনের অভিজ্ঞতা, অপারেশন-পরবর্তী যত্ন ইত্যাদির ওপর অপারেশনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ এবং কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
Discussion about this post