হার্টবিট ডেস্ক
জোড়া লাগানো জমজ শিশু লাবিবা-লামিসা অস্ত্রোপচারে আলাদা হয়ে ভালো আছে। তাদের শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। অস্ত্রোপচারের পর গত সোমবার রাত থেকে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
সেখান থেকে শিগগিরই তাদের সাধারণ শয্যায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তাদের অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক দলের প্রধান ও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আশরাফ-উল-হক কাজল।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, লাবিবা ও লাসিমা সকালে পানি পান করেছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশনও ভালো আছে। সুতরাং তাদের আর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকার প্রয়োজন নেই।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের লাল মিয়া-মনুফা বেগম দস্পতির সন্তান লাবিবা-লামিসা। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মনুফা বেগম পিঠ থেকে কোমড় পর্যন্ত জোড়া লাগানো শিশু দুইটির জন্ম দেন। ৯ দিনের মাথায় রংপুর মেডিকেল কলেজে গেলে সেখানকার চিকিৎকরা ঢামেক হাসপাতালের রেফার করেন।
দুই দফায় চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা শিশু দুইটিকে আলাদা করার ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হননি। গত সোসবার ৩৮ জন চিকিৎসক মিলে টানা ১২ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লাবিব ও লামিসাকে পৃথক করতে সমর্থ হন। শিশু দু’টিরমেরুদণ্ড নিচের দিকে, যোনীদ্বার, পায়ুপথ ও প্রস্রাবের রাস্তা একসঙ্গে জোড়া লাগানো ছিল।
গত সোমবার রাতেই সংবাদ সম্মেলনে অস্ত্রোপচারের বিস্তারিত তুলে ধরেন অধ্যাপক আশরাফ-উল হক কাজল।
তিনি জানান, শিশু দুটির যোনিদ্বার, পায়ুপথ ও প্রস্রাবের রাস্তা একসঙ্গে জোড়া লাগানো ছিল। ওগুলোকে ক্ষতি না করে পৃথক করা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা সফলভাবে করা গেছে। ওই কাজটি প্রথমে করা হয়। এটি করে শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
কাজল বলেন, ওদের মেরুদণ্ডও জোড়া ছিল। তা আলাদা করারও চ্যালেঞ্জের ছিল। মেরুদণ্ড নিচের দিকে জোড়া লাগানো ছিল। স্পাইনাল কর্ডে যদি আঘাত লাগে, তাহলে স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটা নিয়ে খুব ভয় ছিল। কিন্তু নিউরোসার্জনদের দল ওই অস্ত্রোপচারও সফলভাবে শেষ করেছেন।
পুরো অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাচ্চা দুটো পৃথক হওয়ার পর তারা পা নাড়তে পারছে। যদি পা নাড়তে না পারত, তাহলে আমরা বুঝতাম তাদের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা দুজন পঙ্গু হয়ে যেতে পারত।
দ্বিতীয় দফায় ১৩ ডিসেম্বর এই অস্ত্রোপচার না করার কারণ ব্যাখ্যা করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘ওই দিন পৃথক করলে শিশু দু’টির যোনীদ্বার বা পায়ুপথের মতো জটিল বিষয়গুলো আঘাতপ্রাপ্ত হত। এজন্য তারা সবকিছু বিবেচনায় এ দিনটি বেছে নেন।’
শিশু দুটির বাবা লাল মিয়া জানান, ‘জমজ হিসেবে সন্তানদের কোনো মা-বাবা এমন দেখতে চাইবে না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচার যেন সফল হয়। আল্লাহ সেই প্রার্থনা কবুল করেছেন। সন্তানদের আলদা দেখতে পেয়ে অত্যন্ত ভালো লাগছে। এজন্য আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া। চিকিৎসকরা যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
এর আগে ২০১৭ সালে জোড়া লাগা জমজ শিশু তোফা-তহুরা এবং ২০১৯ সালে বাবেয়া-রোকাইয়াকে আলাদা করেন ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
Discussion about this post