হার্টবিট ডেস্ক
বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্রেন অপারেটর ভারতীয় নাগরিক মুন্না মাহোত। গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ক্রেনে মাল পরিবহনের সময় ক্রেনের গ্লাস ডোর ভেঙে তার বাম হাতের কবজিতে পড়লে শরীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় হাতটি । তার সহকর্মীরা স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে বিচ্ছিন্ন হাতটি একটি পলিব্যাগে বরফ দিয়ে ডুবিয়ে এক ঘণ্টা পর খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গেই অপারেশন শুরু করেন ডা. এ. ওয়াই. এম শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের চিকিৎসক টিম। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার অপারেশন শেষে সফল হন চিকিৎসকরা। আহত মুন্না মাহোত বর্তমানে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিউইতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের বলছেন, শুধু খুলনায় নয় দেশেও এমন সফলতা বিরল।
মুন্না মাহোত জানান, তিনি ভাবতেও পারেননি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হাতটি জোড়া লাগানো সম্ভব হবে। অপারেশনের পরদিন থেকেই তিনি মোটামুটি সেই হাতের আঙুল নড়াচড়া করতে পারছেন। চিকিৎসকদের প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, অপারেশনে সফলতা পেয়ে খুশি চিকিৎসকরাও। শিগগিরই তার হাতের পুরো কার্যক্ষমতা ফিরে আসবে বলে আশা করছেন অপারেশনের নেতৃত্ব দেওয়া
চিকিৎসক এ.ওয়াই.এম শহীদুল্লাহর অপারেশনটির সাফল্যকে বিরল ঘটনা বলছেন খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, কাটা হাতটি সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ে আসা খুব জরুরি। হাতে পানি লাগিয়ে নিয়ে চলে আসলে, এটি কাজে লাগানোর সম্ভাবনা খুবই কম। হাতটি পরিষ্কার করে পলিথিনে নিতে হবে। আরেকটি পলিথিনে বরফ দিতে হবে, বরফ লাগানো পলিথিনের মধ্যে কাটা হাতটি রাখা পলিথিনটি রাখতে হবে। এভাবে কাটা হাতটি যদি সঠিকভাবে ফ্রিজ আপ করা হয়। অনেক সময় এ হাত ছয় থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে।
চিকিৎসক টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, মানুষের হাত যদি না থাকে, ইলেকট্রিক হাত লাগানো যায়। তাতে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেই হাত স্বাভাবিক হাতের মত বেশি কাজ করবে না। নিজের হাতের অনুভূতিই আলাদা রকম। এই হাত রিপ্লেস করতে পেরে আমাদের কাছে খুবই ভালো লাগছে। রোগীর অবস্থা উন্নতি দিকে।
ভারতীয় নাগরিক মুন্না মাহোত বলেন, অপারেশন সফল হয়েছে। চিকিৎসা ঠিকঠাক চলছে। সব ঠিক আছে। হাত কাজ করছে, ভালো লাগছে। চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ও সহযোগী অধ্যাপক এ ওয়াই এম শহীদুল্লাহ বলেন, এ ধরনের চিকিৎসায় টিম ওয়ার্কের প্রয়োজন হয়। সেই কাজটাই আমরা করেছি। দ্রুত তাকে ছেড়ে দিতে পারব বলে আশা করছি। তিনি ওই হাত দিয়ে শতভাগ না হলেও ৯০ শতাংশ কাজ করতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।
খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের একটি বেসরকারি মেডিকেল স্কুল। ২০১৮ সালে এটি খুলনা মহানগরীর কেডিএ এভিনিউতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ডায়ালাইসিস ইউনিট, আইসিইউ, নিউনেটাল আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট হাসপাতালে ২৫০টি শয্যা রয়েছে। করোনার সময় হাসপাতালটি করোনা রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।
Discussion about this post