হার্টবিট ডেস্ক
দেশে স্বাস্থ্য সেবায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠনসহ দলীয় চিকিৎসক নেতারা। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও বিভিন্ন পদে চিকিৎসকদের নেতৃত্ব চান তারা। চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে অতি শিগগিরই চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সাইন্টিফিক সেমিনারে চিকিৎসক নেতারা এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেকগুলো মৌলিক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। সেগুলো অতিদ্রুত সমাধান না করলে সামনের দিনগুলোতে অনেক সমস্যা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, অনেক বিষয় ক্যাডার সিস্টেমে করা সম্ভব না। হেলথ সিস্টেম ক্যাডার সিস্টেমে নিলে হবে না। এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার সমাধান হবে না। আপনারাও এভাবে সারাজীবন দাবি জানিয়েই যাবেন।
ইকবাল আর্সলান বলেন, আমাদের দেশে আন্তঃক্যাডার বৈষম্যসহ অনেক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে, যেগুলো পূর্ববর্তী বক্তারা বলেছেন। আমি শুধু বলবো বিদ্যমান সমস্যা দ্রুততম সময়ে সমাধান না হলে ভবিষ্যতে বড়ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আগামী ভবিষ্যতে দেশের স্বাস্থ্য নিয়ে যেই স্বপ্ন দেখি, সেটা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করতে চাই।
চিকিৎসকদের নিয়মিত পদোন্নতি হয় না। এক্ষেত্রে সোসাইটিগুলোকে বলবো, আপনারা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় কাজ করবেন। চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে কথা বলবেন, সামনে তুলে ধরবেন।
চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, দেশে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নেই। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য বিদ্যমান। একদিকে সরকারের আমলারা বন্দুকসহ নিরাপত্তা পাচ্ছেন, আরেকদিকে চিকিৎসকদের শার্টের কলার চেপে ধরছেন রোগীর স্বজনরা।
তিনি বলেন, আমরা দয়া চাই না, দাক্ষিণ্য চাই না। যেখানে সংবিধানে বলা আছে ক্যাডার বৈষম্য থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীও চান আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন করতে। কিন্তু যারা করবে তারা তেলে তৈলাক্ত হয়ে বসে আছে।
এহতেশামুল হক বলেন, এদিন দিন নয়, সামনে আরও দিন আসবে। সময় থাকতে চিকিৎসকদের সঠিক মূল্যায়ন করুন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন আমলা কী করে একজন চিকিৎসক ছুটি চাওয়ায়, তাকে শোকজ করেন? জানতে চাওয়া হয় যে, আপনি ছুটি চান কেন? শোকজ করবেন কোন শক্তিতে? ছুটি দেবেন না ভালো কথা, কিন্তু শোকজ করা কোন ধরনের আইনের বাস্তবায়ন?
চিকিৎসক নেতা বলেন, আমার জুনিয়র চিকিৎসক কনসালটেন্ট, দেড় বছর পদায়ন হয় না। কেন তাদের পদায়নের জন্য ঘুরতে হবে? এরকম বৈষম্য থাকবে কেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী, আপনি আমলাদের প্রতিনিধি নন, আপনি চিকিৎসকদের প্রতিনিধি। আপনি আবারও মন্ত্রী হবেন, আমাদের দিকে তাকান।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আসলে অনেক দূর এগিয়েছি। লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপনসহ নানা ধরনের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। একের পর এক বিশেষায়িত হাসপাতাল হচ্ছে। সর্বশেষ বার্ন ইউনিট হয়েছে ৫০০ বেডের, যা পৃথিবীতে কোথাও নেই।
তিন বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক সমালোচনার পরও শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সমালোচকরাও এখন প্রশংসা করছে। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাদের সমালোচনার কারণেই আমরা সতর্ক থেকেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
ডা. আজিজ বলেন, চিকিৎসকদের মধ্যে থাকা বৈষম্য নিরসন করতে হবে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে জান বাজি রেখে কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ের অনেক নেতিবাচক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। প্রকৃত পেশাজীবী মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। এছাড়া কাজের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হয়।
চিকিৎসকদের সংগঠন মনে করে, আমাদের মেনিফেস্টো বাস্তবায়ন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আমাদের শিক্ষকের অভাব, অথচ স্পেশালিস্টরা বসে আছে। বিশেষ কিছু কাজ হচ্ছে, কারা করছে আমরা জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা শাসক হিসেবে চিকিৎসা সেবায় কাউকে দেখতে চাই না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চাই। সেবা আর শিক্ষা বিভাগের টানাটানিতে অনেক কাজ ব্যহত হচ্ছে। আসরা অনেক দুর্নীতির অভিযোগ দেখেছি। চিকিৎসক রা জড়িত না। চিকিৎসকরা জানে স্বাস্থ্য সেক্টরের কোথায় কি সমস্যা। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দেখতে চাই।
‘স্বাস্থ্য সিকিউরিটি আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। চিকিৎসকরা নিরাপদ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখতে চাই। সে জন্য যা যা করতে হবে সবই দ্রুততম সময়ে করার দাবি জানাই। আমার বিশ্বাস স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
Discussion about this post