হার্টবিট ডেস্ক
যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে এসেছিলেন সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস। সভা শুরু হয়েছে এমন সময় প্রসূতি ওয়ার্ডে দুই নারীর আর্তচিৎকার। চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে একটি প্রশিক্ষণের উদ্বোধনও করেছেন। প্রশিক্ষণে বক্তৃতা চলছে। এমন সময় হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট ইন্টারকমে নার্সরা জানান, জরুরি সিজার করতে হবে দুজন প্রসূতিকে। তবে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাবিবুন্নাহার ফুয়ারা রয়েছেন ছুটিতে।
চিকিৎসক না থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েন প্রসূতিদের স্বজনরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোছা. লুৎফুন্নাহার সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসকে বিষয়টি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওপারেশন থিয়েটার রেডি করার নির্দেশ দেন। পরে সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিলে দুই প্রসূতিকে সিজার করেন। এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল শনিবার দুপুরে যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার দুটি হলেও প্রসূতি মায়ের কেউই চৌগাছা উপজেলার বাসিন্দা নন।
প্রসূতি সুমাইয়ার একজন স্বজন বলেন, আমাদের বাড়ি মহেশপুর হলেও চৌগাছায় প্রসূতি চিকিৎসা ভালো হয় বলে এখানে এসেছি। তিনি বলেন, বড় আপা (উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) ও বড় স্যার (সিভিল সার্জন) সিজার না করলে আমাদের হয় প্রাইভেট ক্লিনিকে নয়তো যশোরে নিতে হতো। আমাদের সে সামর্থ্য ছিল না। তিনি বলেন এখানকার বড় আপা ও যশোরের বড় স্যার অনেক ভালো মানুষ।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম। হঠাৎই ওই হাসপাতালে দুই প্রসূতিকে সিজারের দরকার হয়ে পড়ে। তবে দুঃভাগ্যক্রমে হাসপাতালে সিজারের জন্য চিকিৎসক ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমি সিজার করেছি। এর আগে প্রায় এক হাজারের বেশি সিজার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। তবে এমন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় কোনো প্রসূতিকে অপারেশন করেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রসূতি সেবায় ২০০৪ সাল থেকে পরপর কয়েক বছর উপজেলা পর্যায়ে খুলনা বিভাগের সেরা হয়ে আসছে। প্রসূতি স্বাস্থ্য সেবায় অনন্য অবদানের জন্য হাসপাতালটি বারবার পুরস্কৃত হয়ে আসছে। এ কারণে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা জেলার ৮ থেকে ১০টি উপজেলার বাসিন্দারা প্রসূতি সেবা নিতে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। ফলে প্রতিদিন হাসপাতালটিতে গড়ে ৪ থেকে ৬টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে। তবে হাসপাতালটিতে স্থায়ী কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। প্রেষণে একজন গাইনি কনসালট্যান্ট দিয়ে এখানকার প্রসূতি বিভাগের কার্যক্রম চালানো হয়। তবে ব্যক্তিগত কারণে শনিবার গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. হাবিবুন্নাহার ফুয়ারা ছুটিতে ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. লুৎফুন্নাহার বলেন, আমাদের স্থায়ী কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ডা. হাবিবুন নাহার ফোয়ারা একাই সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন। তবে শনিবার তিনি ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে ছিলেন। অথচ দুজন প্রসূতির সিজার করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল। আমরা তখন একটি প্রশিক্ষণে ছিলাম। বিষয়টি বলতেই সিভিল সার্জন স্যার বললেন, ‘চলুন আমরা সিজার দুটি করে দিই।’
ডা. লুৎফুন্নাহার জানান, দুজন প্রসূতি মা এখন সুস্থ আছেন। দুজনের ছেলে সন্তান হয়েছে।
Discussion about this post