হার্টবিট ডেস্ক
‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নাপা সিরাপের একটি ব্যাচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর মানে কোনো সমস্যা পায়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সোমবার ( ১৪ মার্চ) ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানায়।
অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আশুগঞ্জের যে দোকান থেকে কেনা ওষুধ সেবনের পর ওই দুই শিশু মারা গেছে, সেই দোকান থেকে আটটি বোতল সংগ্রহ করা হয় স্যাম্পল হিসেবে। সেই দোকান থেকে আরও দুইটি ব্যাচের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তিনটি ব্যাচের দুটি করে ছয়টিসহ অভিযুক্ত দোকান থেকে সংগৃহীত আরও দুটি সিরাপের মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধের গুণগত মান সঠিক ছিল।
তবে যে বোতলের সিরাপ শিশু দুটিকে খাওয়ানো হয়েছিল, সেটা পরীক্ষা করতে পারেনি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। কিন্তু স্যাম্পল হিসেবে যেগুলো নেওয়া হয়েছিল, তার নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, সেগুলো মানসম্মত। পরীক্ষা করে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষায় ওই তিনটি ব্যাচের নাপা সিরাপে ক্ষতিকর কোনও উপাদান পাওয়া যায়নি।’
বাচ্চা দুটি কেন কী কারণে মারা গেছে, তা ভিসেরা রিপোর্টে পাওয়া যাবে। তবে ওই শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ এখনও উদঘাটিত হয়নি। তার জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করা হচ্ছে।
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘যে বোতলের ওষুধ খেয়ে শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে, সেই বোতল সিআইডি নিয়ে গেছে, জব্দ করেছে। সিআইডির প্রতিবেদন পেলেই শিশু দুটি নাপা সিরাপ খেয়ে মারা গেছেন কিনা জানা যাবে।’
অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটনার পর আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়। স্থানীয় পুলিশ, ওষুধ সমিতির সদস্য, সিভিল সার্জনসহ পূর্বে বন্ধ করা দোকানে অভিযান চালান তিনি। ওখান থেকে নমুনা হিসেবে ৮ বোতল সিরাপ সংগ্রহ করেন। এগুলো পরীক্ষার জন্য আনা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া একটা টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং অন্য একটি টিম কারখানা পরিদর্শন করে। এরপর আমরা একটি চিঠি লিখি স্থানীয় পর্যায়ে ওই ব্যাচের নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের এখানে পাঠাতে। মাঠ পর্যায়ে যারা ছিলেন তার বলেছেন, সিরাপের কারখানা মান নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন সন্তুষ্টজনক। এছাড়া দোকান থেকে সংগৃহীত ৮ নমুনার মধ্যে ৩টি পরীক্ষা ফল আমাদের হাতে এসেছে। এটির মান সঠিক আছে। মাঠ পর্যায়ে আরও নমুনা পরীক্ষা করা হবে।’
মোহাম্মদ ইউসুফ আরও বলেন, ‘বেক্সিমকো জানিয়েছে, তারা ওই ব্যাচের ৮২ হাজার বোতল সিরাপ বাজারজাত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনও অভিযোগ পায়নি।’
উল্লেখ্য, গেল ১০ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামের দুই শিশু মারা যায়। তাদের মা লিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, নাপা খাওয়ার পর তারা মারা গেছে।
ওই ঘটনা তদন্তে আলাদা দুটি কমিটি গঠন করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন ও ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক-উস-ছালেহীন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুপুর সাহাকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক আরেকটি পরিদর্শন কমিটি করা হয়।
Discussion about this post