হার্টবিট ডেস্ক
সাধারণত থ্যালেটস হল অনেকগুলো রাসায়নিক পদার্থের সমষ্টি যা এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই থ্যালেটস শিশুদের ব্যবহৃত ইরেজার ও অন্যান্য পণ্যে অতি মাত্রায় উপস্থিত।
এনভায়রনমেন্ট অ্যাণ্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো আয়োজিত একটি মিডিয়া ব্রিফিং এ “টক্সিক কেমিক্যালস ইন কিডস স্টেশনারি: থ্যালেটস ইন ইরেজারস” শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে।
এই গবেষণাটি এসডো, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন এবং কোরিয়ার রাজধানী সিউল এ অবস্থিত ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ – ডাব্লিওআইওইএইচ যৌথভাবে পরিচালনা করেছে।
থ্যালেটস প্লাস্টিক এবং অন্যান্য দ্রব্যে সংযোজন হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং তা অনেক ভোগ্য পণ্যেও পাওয়া যায়। এসব যৌগ প্লাস্টিক, যেমন পিভিসিকে, নরম এবং নমনীয় করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো রাসায়নিকভাবে প্লাস্টিকের সাথে আবদ্ধ নয়, তাই এগুলো ভোক্তা পণ্য থেকে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সহজেই মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে।
থ্যালেটস এর উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের স্থানীয় দোকান থেকে বিভিন্ন ব্র্যাণ্ড ও রঙের ৪৭টি ইরেজার সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরীক্ষিত ৪৭টি নমুনার মধ্যে ৩০টি নমুনাতেই থ্যালেটস এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। সাতটি প্রধান থ্যালেটসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য সবগুলো নমুনায় পিভিসি স্ক্রিনিং এবং থ্যালেটস টেস্টিং করা হয়েছিল। ৩০টি নমুনায় ৭টির মধ্যে প্রধান চারটি থ্যালেটসই পাওয়া গিয়েছে যেগুলো হল ডিআইবিপি , ডিবিপি, ডিইএইচপি, ডিইএইচপি এবং ডিআইএনপি। এই প্রধান ৪ টি থ্যালেটস লিভারের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং অ্যালার্জি ও হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। পরীক্ষিত ৩০টি নমুনার মধ্যে, ২১টি নমুনাই থ্যালেটসের নিরাপত্তা সীমা অতিক্রম করেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, এসডোর সভাপতি এবং বাংলাদেশের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘ইরেজার একটি শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্টেশনারি কিন্তু এই ইরেজারগুলো শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে থ্যালেটস এবং দৈনন্দিন পণ্যে এর উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এটি সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। তাদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন কারণ এটি আমাদের বেশিরভাগের কাছে খুবই নতুন একটি বিষয়।’
অনুষ্ঠানের আরেকজন অতিথি বক্তা, আইসিডিডিআর, বি এর এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশন ইউনিটের প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কিছু থ্যালেটস এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষাক্ততার মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে হাঁপানি এবং এছাড়াও এডিএইচডি সিন্ড্রোমের মতো বিকাশজনিত রোগ, মনোযোগে ঘাটতি এবং হাইপারএক্টিভিটির মতো রোগ দেখা গিয়েছে। থ্যালেটস এর প্রভাব ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন এবং থ্যালেটস আমদানি এবং ইরেজার তৈরিতে তা ব্যবহার করার উপর তাৎক্ষণিক বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘‘অনেক দেশ ইতিমধ্যে কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কোরিয়াতে থ্যালেটস এর উপর একটি আইন আছে এবং এর ফলস্বরূপ, তাদের শুধুমাত্র একটি নমুনায় থ্যালেটস পাওয়া গেছে। সুতরাং, এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, একটি সঠিক আইন অনেকাংশে ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া এবং পণ্যগুলোতে, বিশেষ করে শিশুদের স্টেশনারী যেমন ইরেজার যা তারা প্রতিদিন ব্যবহার করে, থ্যালেটসের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার জন্য একটি যথাযথ আইন আরোপ করা।”
Discussion about this post