মো. আরমান বিন আজিজ
৪০ বছরের বেশি যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্ধত্বের একটি অন্যতম কারণ গ্লকোমা। কিন্তু যথাসময়ে চিকিৎসায় এই অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা অনেকটাই সম্ভব। গ্লকোমা হলে শুরুতে আপনার কোনো উপসর্গ দেখা না-ও দিতে পারে। এই অসুখ খুব ধীরে ধীরে কাজ করে। তাই খুব আস্তে আস্তে চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে থাকে।
সুস্থ চোখে একধরনের স্বচ্ছ জলীয় অংশ থাকে, যাকে অ্যাকুয়াস হিউমার বলে। এই জলীয় অংশ চোখের সামনের অংশে থাকে। চোখের স্বাভাবিক চাপ ঠিক রাখতে চোখ প্রতিনিয়ত অল্প পরিমাণে অ্যাকুয়াস হিউমার তৈরি করে আবার সমপরিমাণ জলও চোখ থেকে বের হয়ে যায়। গ্লকোমা থাকলে এই অ্যাকুয়াস হিউমার ঠিকমতো চোখ থেকে বের হয়ে যেতে পারে না। ফলে ফ্লুইডের প্রেশার চোখে বাড়তেই থাকে আর সময়ের সঙ্গে চোখের স্নায়ু বা অপটিক নার্ভেরও ক্ষতি করতে থাকে।
গ্লকোমা অনেক ধরনের হতে পারে। তবে বেশি হয়ে থাকে ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা। এর প্রাথমিক ধাপে কোনো উপসর্গ থাকে না এবং দৃষ্টি স্বাভাবিক থাকে। চোখের স্নায়ু যত খারাপ হতে থাকে, ততই দৃষ্টিতে ব্ল্যাক স্পট বাড়তে থাকবে। প্রতিদিনের কাজকর্মে এই ব্ল্যাক স্পট নজরে না-ও পড়তে পারে— যতক্ষণ না এই স্পট বড় হতে থাকে। এ রোগ ধরা পড়ার মানে অনেকটাই নিশ্চিত যে রোগীর স্নায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব স্নায়ু যখন অকেজো হয়ে যায়, তখন স্থায়ী অন্ধত্বের সৃষ্টি হয়।
- ৪০- ঊর্ধ্ব বয়সীরা
- বংশগত গ্লকোমা আছে যাঁদের
- আফ্রিকান ও হিস্পানিক গোষ্ঠী, এশিয়ান গোষ্ঠীর মানুষ
- চোখের উচ্চচাপ বা অকুলার হাইপারটেনশনের রোগী
- যাঁদের দূরদৃষ্টি ও নিকট দৃষ্টি সমস্যা আছে
- চোখের পূর্ব ক্ষত আছে যাঁদের
- ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, স্বল্প রক্ত চলাচল ক্ষমতা অথবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছে যাঁদের
অ্যাঙ্গেল ক্লোসার গ্লকোমা সাধারণত হয় হঠাৎ চোখের প্রেশার বেড়ে গেলে। সে জন্য আগে থেকে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ বোঝা যায় না।
চোখের প্রেশার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে,
- প্রচণ্ড চোখব্যথা
- বমি ভাব ও বমি
- মাথাব্যথা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি
সাধারণত যেকোনো একটি চোখে এই সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
সম্ভাব্য চিকিৎসা
এখন সব থেকে প্রচলিত চিকিৎসা হলো, লেজার আইরিডোটোমি, যেখানে চোখের আইরিশে লেজার বিমের সাহায্যে ছোট ছিদ্রের মতো করা হয়, যাতে অ্যাকুয়াস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে চোখের প্রেশার কমে যায়। কোনো কারণে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা না গেলে সার্জারি হিসেবে আইরিডেক্টোমি করা হয়, যেখানে সার্জারির মাধ্যমে আইরিশে ছিদ্র করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অ্যাকুয়াস হিউমার উৎপাদনের পরিমাণ কমাতে, চোখের অভ্যন্তরীণ প্রেশার কমাতে বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
গ্লকোমার প্রতিকার
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্লকোমা প্রতিকারের একমাত্র উপায় হলো, যথাসময়ে রোগ নির্ণয় করা।
- ২০ বছর বয়সের পর থেকে সবারই গ্লকোমা স্ক্রিনিং টেস্ট করানো
- যাঁরা ঝুঁকির তালিকায় রয়েছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট সময় পরপর চোখের পরীক্ষা করানো
- গ্লকোমায় আক্রান্ত অতীব ক্ষীণদৃষ্টি বা লো-ভিশন রোগীদের ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত একজন গ্র্যাজুয়েট অপটোমেট্রিস্ট কিংবা লো-ভিশন স্পেশালিস্টের তত্ত্বাবধানে থাকা
- গ্লকোমায় আক্রান্ত সবার নিয়মিত চোখ পরীক্ষা ও ওষুধ খাওয়া
লেখক: সাবেক ফ্যাকাল্টি ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
Discussion about this post