হার্টবিট ডেস্ক
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়েছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনি’। কিডনি রোগের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। তবে সতর্ক থাকলে একে প্রতিরোধ করা যায়। তাই কিডনি রোগের ঝুঁকি এবং এই রোগ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরি। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৫ কোটি। আর বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। দিনে দিনে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার নতুন রোগী যোগ হয়, তাদের ৮০ শতাংশই কিডনি ডায়ালাইসিস বা সংযোজনের চিকিৎসার অভাবে মারা যান। দেশে কিডনি চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, তবে ব্যয়বহুল। তাই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং সতর্ক থাকলে কিডনির জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশীদ বলেন, ‘কিডনি রোগীদের চিকিৎসার প্রধান অন্তরায় দেশের অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা। আর যতটুকুও চিকিৎসা রয়েছে সেটাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে কিডনি জটিলতায় ভুগছে প্রায় ২ কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে যাদের কিডনি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ড্যামেজ হয়ে গেছে, তাদের জীবন বাঁচাতে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ৯০ শতাংশ মানুষের পক্ষে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা চালানো সম্ভব হয় না।’
‘সেইসঙ্গে বছরে নতুন করে যোগ হয় ৪০ হাজার রোগী। তাদের মধ্যেও আবার মাত্র ১০ হাজার রোগী চিকিৎসার আওতায় আসে, আর বাকি ৩০ হাজারই থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। আর এর প্রধান কারণ অপ্রতুল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা।’
ডা. হারুন আর রশীদ আরও বলেন, ‘কিডনি রোগের উপসর্গ প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না। যখন বোঝা যায়, তখন বমি ভাব, ক্ষুধামান্দা, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
আর দেশের মোট রোগীর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি রোগী চিকিৎসার আওতায় আসে না বলে মনে করেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মুহিবুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। চিকিৎসা ব্যবস্থাটা ঢাকামুখী। আর খুব বেশি হলে বিভাগীয় শহরগুলোতে রয়েছে। গ্রামে এ চিকিৎসা একেবারেই নেই। যার কারণে বেশিরভাগ রোগীই একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়, কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না।
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ পর্যায়ে যখন যায়, যখন ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্ট অর্থাৎ কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়, সেখানেই বেশি সমস্যাটা হয়। কারণ ডায়ালাইসিস এবং প্রতিস্থাপন দুটোই এক্সপেনসিভ। অথচ কিডনি রোগ আগে থেকে শনাক্ত করা গেলে অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায়।
‘ডিলে’ করলে অনেক জটিলতা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ জন্য উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন নির্গত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে রুটিন মাফিক পরীক্ষা করাতে হবে, আর এ জন্য অনেক বেশি খরচ হয় না। অথচ কেবল মানুষ সচেতন নয় বলে শেষে ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে আর চিকিৎসাই করা সম্ভব হয় না, যার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়।’
নারী-পুরুষের মধ্যে কারা বেশি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য পুরুষরাই বেশি আসেন, নারীদের আসার সংখ্যা কম। আর এখনতো শিশুরাও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আরেকটি বিশেষ বার্তা আমি দিতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ কিছু থেকে কিছু হলেই ওষুধের দোকান থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খায়, যেটা কিডনি রোগের অন্যতম আরেকটি কারণ। সেইসঙ্গে গরমের সময়ে ডায়রিয়াতে ভোগে অনেকেই। ডায়রিয়া হলে কিডনি বিকল হয়ে যায়। তাই ডায়রিয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে পানিশূন্যতা রোধের জন্য চিকিৎসা করা উচিত—এখানে কোনও বিলম্ব করা যাবে না।’
আর চিকিৎসা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কাজে লাগানোর তাগিদ দেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে যারা রয়েছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুললে তারা অন্তত কিডনি রোগী শনাক্ত করতে পারবেন, তখন রোগীরা উন্নত চিকিৎসা নিতে আমাদের কাছে আসতে পারেন। কিন্তু যদি শনাক্তই না করা যায়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?’
আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানালেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশে কিডনি রোগ নিয়ে কোনও নীতিমালা নেই, কোনও কৌশলপত্র নেই, নেই কোনও নির্দেশিকা। তবে সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে, যদিও বোঝা যাচ্ছে না কোথা থেকে শুরু করতে হবে।
Discussion about this post