হার্টবিট ডেস্ক
প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ১০ হাজারই থাকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ডুবে শিশুদের এভাবে প্রাণহানি রোধে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশের কার্যক্রমও পরিচালিত হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গ্লোবাল রিপোর্ট অন ড্রাউনিংয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এক থেকে চার বছরের শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশই মারা যায় পানিতে ডুবে।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে বেসরকারি সংস্থার কিছু উদ্যোগ থাকলেও এতদিন সরকারের দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো কার্যক্রম ছিল না। ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ এবং শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ নিয়ে এই প্রথম বড় আকারে প্রকল্প নিলো সরকার।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) ‘ইন্টিগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বেসরকারি সংস্থা ও সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সহায়তায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিশু একাডেমির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৬ জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশু যত্ন কেন্দ্র করা হবে। গবেষণায় মোতাবেক পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ সময় অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশুরা এসব কেন্দ্রে থাকবে। কেন্দ্রে পাঁচ ঘণ্টা থাকার সময় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সহায়ক নানা শিক্ষা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই ৪৫ উপজেলায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী দুই লাখ শিশু কার্যক্রমটির আওতায় আসবে।
একই সঙ্গে এই ৪৫ উপজেলায় ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী তিন লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতাভুক্ত অঞ্চলের দুই লাখ মা-বাবাকে সচেতন করা হবে, যেন তারা শিশু যত্ন, সুরক্ষা এবং বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান) অনুবিভাগ মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। প্রকল্প নেওয়ার আগে গবেষণা হয়েছে। কোন শিশু ঝুঁকিপূর্ণ, তা সেখানে উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাবা-মায়েরা যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন শিশুরা বেশি পানিতে ডুবে মারা যায়। এজন্য ওই সময়টা শিশুদের নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে পারলে এই মৃত্যুহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে ওই সময়টায় শিশুদের শিক্ষামূলক নানা কর্মকাণ্ডে রাখা যেতে পারে, যেন শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশটা হয়। সেই অনুযায়ী নতুন প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।’
‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা শিশু যত্ন কেন্দ্র করবো। সরকার ও এনজিওদের সহায়তায় ১৬ জেলায় আট হাজার কেন্দ্র করা হবে। সবার সহযোগিতায় শিশু একাডেমি মূলত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’
এই প্রকল্পের আওতায় ছয় থেকে ১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর এক লাখ ২০ করে তিন বছরে তিন লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে।’
শিশু যত্ন কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় নারীরাই হবেন যত্নকারী ও সহকারী যত্নকারী। এক্ষেত্রে ১৬ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হবে। তাদের সাত দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতি বছর তারা রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের এক হাজার ৬০০ জন সাঁতার প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
‘এই প্রকল্পের আওতায় শিশুদের লালন-পালন ও যত্ন নেওয়ার বিষয়ে মা-বাবাদের সচেতন করা হবে। প্রতি মাসে বাবা-মাকে নিয়ে একটি সেশন হবে। শিশুর যত্ন, বিকাশ কিংবা শিশু পানিতে ডুবলে কী করতে হবে- সেই সব বিষয় থাকবে সেশনে। যে শিশুরা সেবা পাবে তাদের পরিবারকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না।’
প্রকল্পটি তিন বছর মেয়াদী। ২০২৪ সালের ৩০ জুন এর মেয়াদ শেষ হবে।প্রকল্প ব্যয়ের ৮০ শতাংশ টাকা (২১৭ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার) আসবে সরকারের তহবিল থেকে। বাকি ২০ শতাংশ (৫৪ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার) টাকা অনুদান হিসেবে দেবে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোর্ড ইনস্টিটিউশন ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজ।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, দেশের ১৬ জেলা তথা বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
Discussion about this post