হার্টবিট ডেস্ক
আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন শ্রবণ সমস্যার কবলে পড়বে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইটে শ্রবণবিষয়ক এক প্রতিবেদনে এ সতর্কতার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া মানুষের সংখ্যা আগামী তিন দশকে দেড় গুণেরও বেশি বাড়তে পারে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন হতে পারে। অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো ধরনের শ্রবণ সমস্যা নিয়ে বসবাস করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ ২ দশমিক ৫ বিলিয়নের মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন মানুষের অবস্থা এমন গুরুতর পর্যায়ে যেত পারে যে তাদের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবার প্রয়োজন হতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এতে বলা হয়, শ্রবণ সমস্যা সৃষ্টির অনেক কারণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিবেদনে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস প্রতিরোধ ও সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস বলেছেন, ডব্লিউএইচওর নতুন প্রতিবেদনটিতে শ্রবণ সমস্যার মাত্রা যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি সমাধানও দেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে বিশ্বের সব দেশকে তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এ বিষয়কে একীভূত করতে উৎসাহিত করেন ডব্লিউএইচওর প্রধান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ শ্রবণশক্তি হ্রাস প্রতিরোধ সম্ভব রুবেলা-মেনিনজাইটিসের টিকাদান, প্রসূতি-নবজাতকের যত্নআত্তির উন্নয়ন, মধ্যকর্ণের সংক্রমণজনিত প্রদাহ শনাক্ত-চিকিৎসা প্রভৃতির মাধ্যমে। আরও বড়দের ক্ষেত্রে তা প্রতিরোধ সম্ভব শব্দ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ শ্রবণ, কানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত প্রভৃতির মাধ্যমে।
শ্রবণেন্দ্রীয়ের যত্ন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে ২০০৭ সালের এই দিনে প্রথমবারের মতো পালিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার কেয়ার ডে’। কানের বহিরাংশ বা বহিকর্ণ দেখতে ইংরেজি সংখ্যা ৩ বা থ্রির মতো। তাই ইংরেজি বছরের তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ৩ মার্চকে বিশ্ব কানের যত্ন দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ২০১৬ সালে এ দিবসের নামকরণ করা হয় ‘World Hearing Day’ অর্থাৎ ‘বিশ্ব শ্রবণ দিবস’। সে সময়ে শব্দদূষণকে শ্রবণ হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রচারণা চালানো হতো দিবসটিকে কেন্দ্র করে। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রবণতন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টিকারী নানা বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী নানাবিধ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হয় এ দিবস।
সময়োপযোগী ও যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই বিপুলসংখ্যক শ্রবণশক্তি হ্রাস ঠেকাতে পারে। আর এ লক্ষ্যকে সফল করতে আজকের সময়ে শ্রবণজটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ শব্দ দূষণ কমিয়ে আনার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি।
এজন্যে প্রয়োজন নিজ নিজ জায়গা থেকে উচ্চশব্দ এড়িয়ে চলা এবং উচ্চশব্দের উৎস যেমন হেডফোন,মাইক, গাড়ির হর্ন, কল-কারখানার ও নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতি, সাউন্ডবক্স ইত্যাদির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবেই কমবে শব্দদূষণ জনিত শ্রবণ জটিলতা,অকালেই বধির হতে হবে না কোন শিশুকে, পরিবার ও সমাজের বোঝা হতে হবে না কোনও তরুণকে।
Discussion about this post