আবদুল্লাহ আল মারুফ
অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্মদানে মায়েদের আগ্রহী করতে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে ভিন্ন উদ্যোগ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি নবজাতক ও মায়েদের দেওয়া হয় শুভেচ্ছা উপহার। বেলুন ফুলিয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে তৈরি করা হয় এক আনন্দঘন পরিবেশের। এমন উৎসাহমূলক কর্মকাণ্ডে সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারি করানোর প্রবণতা।
উপজেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল হাসান সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর যোগদানের পর দেখি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীর সংখ্যা খুবই কম। এই উপজেলার গর্ভবতী মায়েরা নরমাল ডেলিভারিতে অনাগ্রহী। নরমাল ডেলিভারি বিষয়ে সচেতন করতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মায়েদের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের উৎসাহমূলক সভা ও সেমিনার করি। এতেও লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হয়নি। পরে নবজাতকদের উপহারের কথা চিন্তা করি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব সহকর্মীকে এই কাজে আগ্রহী করে তুলি। তারাও সাহায্য করেন। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের উপহার তুলে দেই। এছাড়া প্রসূতিকে পুরো কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক ও এক মাসের আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। আগে যেখানে মাসে ২০ থেকে ২২টি নরমাল ডেলিভারি হতো, সেখানে বর্তমানে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪২টি নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। আমরা প্রতিটি মা ও শিশুকে উপহার দিচ্ছি।
ডা. কামরুল আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্রতি মাসে তিন জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, তিন জন সিএইচসিপি ও তিন জন হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্টকে বেস্ট পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হচ্ছে। এতে করে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। সেবার মানও আগে থেকে অনেকগুণ ভালো হয়েছে।
এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫৬ বছর পর অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা হয়েছে গত ৬ ডিসেম্বর। চালুর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ওটি হচ্ছে। চালুর পর ৪০টির বেশি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভিক্টোরিয়া কলেজের বরুড়া ছাত্র কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যকর্মী রুবেল হোসেন বলেন, বরুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। এতে এই উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে। আমরা চাই বরুড়ায় এই উদ্যোগ চলমান থাকুক।
বরুড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নারী অধিকার ফোরামের পরিচালক অ্যাডভোকেট শাকিলা জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি হাসপাতালের উদ্যোগের বিষয়ে জেনেছি। এর আগে কেউ এমন ভিন্ন চেষ্টা চালায়নি। এখন বরুড়ায় নরমাল ডেলিভারি বেড়েছে। অনেক মায়েদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা খুবই আনন্দিত। হাসপাতালের উদ্যোগে আর্থিকভাবে রোগীরা উপকৃত হয়েছে।
জেলারে সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা প্রশংসনীয় কাজের কথা শুনেছি। বরুড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল হাসান সোহেল নিজের পকেটের টাকায় উপহারের ব্যবস্থা করেছেন বলে শুনেছি। তার এই কাজকে সাধুবাদ জানাই। আমি মনে করি বরুড়া নয় পুরো কুমিল্লা তথা সারা বাংলাদেশে এই উদ্যোগ চালু করলে দেশে অস্ত্রোপচারে সংখ্যা কমে আসবে। কমবে মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি। সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post