হার্টবিট ডেস্ক
এক কোটি ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার বিশেষ ক্যাম্পেইনে আজ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে শুরু হয়েছে। টিকা পেতে নিবন্ধন বা জন্মসনদের মতো কোনও কাগজের বাধ্যবাধকতা না থাকায় মানুষ টিকা নিতে ভিড় করেছেন কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন’ পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এ দিনে টিকা নিতে জন্ম নিবন্ধন বা কোনও কাগজপত্র লাগবে না। মোবাইল নম্বর দিয়েই টিকা নেওয়া যাবে।
সকাল ৮টা বা কোথাও কোথাও সকাল সাড়ে ৮টায় এই গণটিকাদানের বিশেষ কর্মসূচি শুরু হয়। তবে ভোর থেকেই হাসপাতালগুলোতে টিকা নিতে মানুষের ভিড় করে। এমনকী কোথাও কোথাও এই ভিড় সামলাতে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালে টিকাপ্রত্যাশীদের ভিড় সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আখতার।
তিনি বলেন, সকাল ৭টার আগে থেকেই মানুষ টিকা নিতে আসতে শুরু করেছেন। রেজিস্ট্রেশন থাকার বাধ্যবাধকতা না থাকায় মানুষ উৎসাহ নিয়ে টিকা নিতে আসছেন। সকাল সাড়ে ১০টার ভেতরেই তিন হাজার মানুষ এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভিড় সামলাতে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বারবার নিরাপত্তারক্ষীদের মাইকিং করতে হচ্ছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত বুথ রয়েছে ১৬টি। তার মধ্যে ১৪টিতেই প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে মানুষের ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়েছে।
টিকাপ্রত্যাশীরা বলছেন, ২৬ তারিখে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে, এটা আরও আগে থেকে জানানো উচিত ছিল। অনেকেই রয়েছেন যারা রেজিস্ট্রেশন করেও এসএমএস পাননি, অথবা কোনও কারণে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। তারাও এখানে এসে টিকা নিতে পারতেন—বলেন টিকা প্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান।
অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক জানিয়েছেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। যাদের জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট নেই, তারা ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে সরাসরি হাসপাতাল ও টিকাকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে তাদের তথ্য নথিভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে। তাদেরকে একটি করে কার্ড দেওয়া হবে। সেটিই হবে টিকা নেওয়ার প্রমাণ। এসব কিছুর প্রস্তুতি এবং নির্দেশনা ইতোমধ্যেই দেশের সব সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।’
২৬ ফেব্রুয়ারির কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১ কোটি টিকা দেওয়ার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যরা এসব স্থান নির্ধারণ করবেন।
স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও তা হতে পারে। পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে দল থাকবে। এদিন নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরেও প্রতি উপজেলায় পাঁচটি ও প্রতি জেলায় ২০টি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকবে। যেখানে জনসমাগম বেশি সেখানে যেন তারা গিয়ে টিকা দিয়ে আসতে পারে।’
ডা. শামসুল হক জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ৩০টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ৪০টি, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে প্রতিটি জোনে ৬০টি করে এবং খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং রংপুরের প্রতিটি জোনে অতিরিক্ত ২৫টি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকবে। ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার প্রতিটি দল ৩০০ জনকে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি দল ৫০০ জনকে টিকা দেবে।
বাংলাদেশে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়। দুই মাস পর ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম। আর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ৭৬ লাখ ডোজের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছিল এক দিনে।
Discussion about this post