ডা. ডায়না চাকমা
সবার একটা বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে বাংলাদেশে এমবিবিএস করলে বিদেশে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। কারণ, দেশে এমবিবিএস করে বাইরে পড়তে যাওয়াটা একটু কঠিন, তবে একেবারে অসম্ভব কিছু না। চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশে পড়াশোনার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ডা. ডায়না চাকমা, শিক্ষার্থী, ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যান্ড ওয়ান হেলথ, এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি রসলিন ইনস্টিটিউট।
উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারবেন
স্নাতকোত্তর শেষ করার পর চাইলে আপনি সেই দেশে চাকরির জন্য আবেদনও করতে পারবেন, আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারবেন। আপনার দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। আমি ইউরোপে পড়তে এসেছি ইরাস্মাস মুন্ডুস স্কলারশিপ নিয়ে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই স্কলারশিপ স্পনসর করে। এই স্কলারশিপের একটি অন্যতম দিক হলো, একেকটা প্রোগ্রামের হোস্ট থাকে ন্যূনতম দুইটা বা তিনটা ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি; অর্থাৎ একেকটা সেমিস্টার করার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দুইটা বা তিনটা দেশে যেতে হয়। এতে করে পড়ালেখার পাশাপাশি ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানা যায়৷
এমবিবিএস করার পর
বাংলাদেশে এমবিবিএস করার পর বিদেশে যাওয়ার জন্য দুইটা ক্যারিয়ার ফিল্ড আছে: ক্লিনিক্যাল ও নন-ক্লিনিক্যাল। নন-ক্লিনিক্যাল ফিল্ড মূলত গবেষণার কাজের জন্য। অনেকেই ক্লিনিক্যাল লাইনে না পড়ে পাবলিক হেলথ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান। বিশ্বের অনেক দেশে পাবলিক হেলথ কিংবা অন্যান্য মেডিকেলসংক্রান্ত বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা যায়।
বৃত্তি
অন্য সব ফিল্ডের মতোই বাংলাদেশের ডাক্তারদেরও উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আছে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপের সুবিধা; অর্থাৎ এসব স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়তে এলে পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি আবাসন ও স্বাস্থ্য ভাতা দেবে স্কলারশিপ কমিটি।
ডাক্তারদের জন্য কিছু সম্মানজনক বৃত্তি
ইরাস্মাস মুন্ডুস স্কলারশিপ
শেভনিং স্কলারশিপ
কমনওয়েলথ শেয়ার্ড স্কলারশিপ
এসআইএসজিপি স্কলারশিপ
অস্ট্রেলিয়ান অ্যাওয়ার্ড স্কলারশিপ
ডাড স্কলারশিপ
ফুলব্রাইট স্কলারশিপ
ক্লিনিক্যাল না নন-ক্লিনিক্যাল
প্রথমেই ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে যে আপনি কী করতে চান। জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের পাশাপাশি ক্যারিয়ার গড়ার অন্য আরও উপায় আছে। ‘আমি এটাই চাই’ এ সিদ্ধান্তে আসার পর বাকি পথ আস্তে আস্তে তৈরি হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, বাইরে স্কলারশিপ ও চাকরির ক্ষেত্রে আপনি ক্লিনিক্যাল কোনো কিছুর সঙ্গে আর সংযুক্ত থাকতে পারবেন না; অর্থাৎ তথাকথিত ডাক্তারি করা যাবে না। আর আপনি যদি বিদেশে ক্লিনিক্যাল ফিল্ডে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে কোনো স্কলারশিপ পাওয়া যাবে না। তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নেবেন কোন দেশে আপনি যেতে চান।
বিভিন্ন দেশে ক্লিনিক্যাল ফিল্ডে চাকরি করার জন্য বিভিন্ন রকম পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। একেকটা পরীক্ষার নিয়মকানুন একের রকম। পরীক্ষাগুলোর সব ধাপ সফলভাবে পার করার পর রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আইইএলটিএস স্কোর
শিক্ষা সনদ
সহশিক্ষা কার্যক্রম সনদ
মোটিভেশন লেটার
জন্মনিবন্ধন সনদ
পাসপোর্ট
জাতীয় পরিচয়পত্র
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মোটিভেশন লেটার। এখানে নিজের গল্পটা বলে স্কলারশিপ কমিটিকে বোঝাতে হবে যে কেন আপনাকেই এই স্কলারশিপ দেওয়া উচিত।
সুযোগ-সুবিধা
ইউরোপ বা আমেরিকার পড়াশোনার মান বাংলাদেশের চেয়ে এখনো অনেক এগিয়ে। এখানে উন্নত ল্যাবে কাজ করার সুযোগ আছে, তথাগত মুখস্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে থাকতে হয় না; বরং নিজের চিন্তাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশে ডাক্তারদের জন্য ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টে স্নাতকোত্তর করার বেশ ভালো সুযোগ আছে। কিন্তু রিসার্চ সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ মেডিকেল রিসার্চ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। বাইরের পরিবেশে থাকতে গেলে কোনোভাবেই একঘেয়েমি কাজ করে না; বরং মন উদার হয়, ভিন্নতার প্রতি বিনম্র হতে শেখা যায়।
Discussion about this post