হার্টবিট ডেস্ক
এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে মেডিকেল লাইফের বাস্তব গল্প নিয়ে লেখা ডা. তাসনিয়া আহমেদের তৃতীয় বই ‘দুইশো তেরোর গল্প’। ইতিমধ্যে সতীর্থ প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।
তাসনিয়া আহমেদ পেশায় চিকিৎসক হলেও নেশায় তিনি একজন লেখক। দুইশো তেরোর গল্প বইটি লেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একদিন হুট করেই আমার মনে হলো, এই যে পাঁচ বছর ধরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেছি। এক বছর ইন্টার্নি করেছি, সাড়ে ছয় বছর সিলেট থেকেছি, সারা জীবনের জন্য নামের আগে একটা ডাক্তার লাগায়ে ফেলি। সারা জীবনের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো কিছু বন্ধু নিয়ে আসলাম, তো এই এতো এতোকিছু নেওয়ার পরে আমি ওসমানী মেডিকেলকে, সিলেট শহরকে, আমার প্রিয় হোস্টেলটার দুইশো তেরো নাম্বার রুমকে, আর আমার এই প্রফেশনের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে আমি কী দিতে পারলাম?’
ডা. তাসনিয়া বলেন, ‘আমার মনে হতে থাকলো, আমি যেহেতু লিখতে পারি, আমার সামনে একটা বিরাট সুযোগ আছে। টু শো গ্র্যাটিচ্যুড টু মাই কলেজ, টু পে দ্য রেসপেক্ট দ্যাট মাই প্রফেশন ডিজার্ভস! সেই ভাবনা থেকে শুরু করলাম নিজেদের জীবনের ছোট ছোট গল্প নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘দুইশো তেরোর গল্প’।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফার্স্ট ইয়ার থেকে শুরু করে চিকিৎসক হয়ে ওঠা পর্যন্ত আমাদের প্রত্যেকের যে, গতানুগতিক অথচ অনন্যসাধারণ গল্প, সেইটাকেই নিজের ভাষায়, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লিখে ফেললাম। আমাদের চিকিৎসকদের ডাক্তার হয়ে ওঠার এই গল্পটা, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, আমাদের একান্ত আপন টানাপোড়েন, আমাদের স্ট্রাগল, আমাদের বন্ধুত্ব, আমাদের ভালোবাসা- সব দুই মলাটে তুলে আনাটা বাংলা ভাষায় বোধহয় খুব বেশি হয়নি। এই কাজটা তাই আমি করেছি নিজের সবটুকু আদর, সবটুকু যত্ন ঢেলে।’
তাসনিয়া আহমেদ বলেন, ‘আমার বইটি উৎসর্গ করেছি ডা. দিলরুবা বেগম লেডিস হোস্টেলের দুইশো তেরো নাম্বার রুমকে, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজকে এবং সিলেট শহরকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বইটির প্রচ্ছদের সাথেও জড়িয়ে আছে, অন্যরকম আবেগের এক গল্প। প্রচ্ছদে যে লেখাগুলি আছে, তার বিশেষত্ব হচ্ছে, এই লেখাগুলি আমরা দুইশো তেরোতে থাকার সময় তার দেয়ালে লিখেছিলাম। স্ক্যান করে সেই লেখাগুলি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রচ্ছদটাও তাই আমার বড় দুর্বলতার জায়গা।’
বইটির বর্ণনা দিতে গিয়ে ডা. তাসনিয়া এভাবে বলেছেন, দুইশো তেরোর গল্প একঝাঁক মেডিকেলপড়ুয়ার, যারা ডাক্তার হবার স্বপ্নে ঘর ছেড়ে আসে অনেক দূরের একটা শহরে। গল্পটা তাদের খুশি আর আনন্দের। চায়ের আড্ডায় কিংবা ডেমো ক্লাসের পড়ার ফাঁকে অকারণ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার। গল্পটা তাদের মন ভাঙার। তাদের ব্যর্থতা, তাদের সীমাবদ্ধতার। তাদের হারিয়ে যাওয়ার কিংবা হারিয়ে নিজেকে পাওয়ার।
‘গল্পটা তাদের গায়ে সাদা অ্যাপ্রন জড়ানোর। স্টেথোতে জীবনের ধুকপুক কিংবা টর্চের আলোয় মৃতের পিউপিল দেখে থমকে যাবার। গল্পটা একটা শহরের। বৃষ্টিভেজা, স্নিগ্ধ, চায়ের ঘ্রাণে ভেসে থাকা একটা শহর, যে শহর সবাইকে বুকে টেনে নেয় পরম মমতায়, জিজ্ঞেস করে, ‘কিতা খবর? বালা নি সব?’’ বলেন তিনি।
লেখক পরিচিতি
তাসনিয়া আহমেদ পেশায় চিকিৎসক। তিনি এমবিবিএস পাস করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ই অনলাইনে লেখালেখি শুরু করেন। লেখক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ ২০১৭ সালের বইমেলায় একটি গল্প সংকলনে গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘বয়স যখন ষোলোই সঠিক’, ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ । এরপর প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘দুইশো তেরোর গল্প’। চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করাই এখন তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য নয়; পাশাপাশি লিখে যেতে চান- ভালোবাসার গল্প, মানুষের গল্প আর বেঁচে থাকার গল্প।
Discussion about this post