মো. ইকবাল হোসেন
মাছ খাওয়া হয় প্রোটিনের জন্য। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন হচ্ছে কোলাজেন, যা মাছের চামড়ায় থাকে। মাছে প্রোটিনের পাশাপাশি পাওয়া যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের একটা বড় অংশ মাছের চামড়ায় থাকে। মাছের ছাল ফেলে দিলে সেসব উপাদান পাওয়া যায় না।
কোলাজেন
এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন উপাদান। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেন ভূমিকা রাখে।
এই কোলাজেন প্রোটিন আমাদের শরীরেই তৈরি হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট বয়সের পর আর এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরে তৈরি হয় না। তখন এর জন্য বাইরের উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়। মাছের চামড়া হচ্ছে কোলাজেনের বড় উৎস।
কোলাজেনের অভাবে যা হয়
- শরীরে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে
- ক্ষত শুকাতে দেরি হয়
- শারীরিক দুর্বলতা ও কার্যক্ষমতা কমে যায়
- ত্বক পাতলা হয় এবং চর্মরোগ দেখা দেয়
- চুল পড়ে টাক তৈরি হয়
- খাদ্য হজমে বা পরিপাকে সমস্যা হয়
- শ্বাসকার্য বাধাগ্রস্ত হয়
- হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয় এবং ব্যথার অনুভূতি হয়
- রক্ত পরিবহনতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটে
- পেশি দুর্বল ও শারীরিক অবসাদ দেখা দেয়
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
মানবদেহে খাবারের বিপাকক্রিয়া ও শরীর সুস্থ রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের বিকল্প নেই। প্রদাহ কমাতে, হৃদ্রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সবাইকে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
প্রায় সব মাছেই কম-বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকলেও বেশি পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ডকোসাহেক্সোনয়িক অ্যাসিড। এটি হৃদ্রোগ হতে বাধা দেয়।
উপকারিতা
- এটি রক্তে ট্রাইগ্লসারাইডের পরিমাণ কমায়
- রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমায়
- রক্তচাপের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করে
- হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে
- বুদ্ধির বিকাশ, স্মৃতিশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির জন্য সহায়ক
- বিষণ্নতা, ডিমেনশিয়া, হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার দূর করতে সহায়তা করে
- শিশুদের সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে
- ক্যানসার ও রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে
আঁশ
খাবারের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ফাইবার বা আঁশ। কোষ্ঠকাঠিন্যসহ কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে এটি।
মাছের সঙ্গে ফ্রিতে এত উপকার পাওয়ার জন্য নিয়ম করে মাছের চামড়া খান। শিশুদেরও এটি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
লেখক: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
Discussion about this post