হার্টবিট ডেস্ক
গলা ব্যথা একটি খুবই সাধারণ সমস্যা হলেও সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে এর কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
* মধ্যকর্ণের প্রদাহ এবং মধ্যকর্ণে পানি জমা
* ল্যারিনজাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস
* কিডনির সমস্যা
গলা ব্যথার কারণ
গলা ব্যথা অনেক কারণে হতে পারে। এর মধ্যে ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ। অন্য কারণ হলো-
* টনসিলের পাশে পুঁজ হওয়া বা টনসিলের ইনফেকশন
* গলার পেছনের অংশে পুঁজ হওয়া
* গলায় কোনো বস্তু, বিশেষ করে মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় ইত্যাদি আটকে যাওয়া
* গলায় সরাসরি আঘাত পেলে
* জিহ্বার পেছনে কোনো ক্ষত বা আলসার হলে
* এসিড বা ক্ষারীয় কোনো পদার্থ খাওয়ার কারণে গলার ভেতরে ক্ষত হলে
* খাদ্যনালি অথবা শ্বাসনালির ক্যান্সার হলে
* গলার বাইরের দিক থেকে প্রচণ্ড ব্যথা পেলেও গলা ব্যথা হতে পারে।
ফ্যারিনজাইটিস
গলা ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হলো ফ্যারিনজাইটিস। মূলত ভাইরাসজনিত ফ্যারিনজাইটিস বেশি হয়ে থাকে, যা থেকে পরে ইনফেকশন হতে পারে। ফ্যারিনজাইটিস অনেক সময় একই সঙ্গে টনসিলের প্রদাহও তৈরি করে।
সাধারণত এডেনো ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস ও রেস্পাইরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসের কারণে ফ্যারিনজাইটিস হয়। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা, মিসেলস এবং ভেরিসেলা ভাইরাসের সংক্রমণেও গলা ব্যথা হতে পারে।আবার স্ট্রেপটোকক্কাস হিমোলাইটিকাস, নন হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস এবং হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার কারণেও ফ্যারিনজাইটিস হয়।
এ ছাড়া ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে রুমে গাদাগাদি করে বসবাস করা, তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন, অতিরিক্ত ধুলাবালি ও দূষণযুক্ত পরিবেশে কাজ করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণেও ফ্যারিনজাইটিস হতে পারে।এসবের বাইরে ডিপথেরিক ফ্যারিনজাইটিস, ভিনসেন্টস এনজাইনা, টিউবারকুলার ফ্যারিনজাইটিস, সিফিলিটিক ফ্যারিনজাইটিস ও ছত্রাক সংক্রমণজনিত ফ্যারিনজাইটিসও হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গ
ফ্যারিনজাইটিস হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায় তা নির্ভর করে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ইনফেকশনের তীব্রতার ওপর-
* গলার ভেতর খুসখুস করা
* ঢোঁক গিলতে অসুবিধাবোধ করা
* গলার স্বর বসে যাওয়া
* গলায় ব্যথা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।
পাশাপাশি যদি নাকে ও সাইনাসে ইনফেকশন থাকে, তাহলে নিচের লক্ষণগুলোও থাকতে পারে-
* নাক দিয়ে পানি পড়া
* হালকা জ্বর ও মাথা ব্যথা
* সর্দি, হাঁচি এবং শরীরে ব্যথা হওয়া।
ফ্যারিনজাইটিস মারাত্মক আকার ধারণ করলে এর সঙ্গে সঙ্গে টনসিলের প্রদাহ হতে পারে, টনসিল ফুলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায়-
* প্রচণ্ড জ্বর (সাধারণত ১০০-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
* খাবার গিলতে বা ঢোঁক গিলতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া
* ইউভুলা (আলজিহ্বা) ও নরম তালু ফুলে যাওয়া
* টনসিল ফুলে লালচে হওয়া
* লিম্ফ লোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
* মাথা ব্যথা করা
* বমি হওয়া
* ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া (স্কারলেট ফিভার)
* শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড কাঁপুনিও হতে পারে।
তবে কোন জীবাণু দিয়ে ফ্যারিনজাইটিস হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে লক্ষণ ও উপসর্গ। চিকিৎসাও আলাদা হয়। যেমন স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দিয়ে যে ফ্যারিনজাইটিস হয় তাতে শুধু গলা নয়, কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যথা সময়ে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা না হলে কিডনির গ্লোমেরুলাসে প্রদাহ হয়ে কিডনি নষ্ট হতে পারে।
ফ্যারিনজাইটিসে করণীয়
* গড়গড়া : গলা ব্যথার সবচেয়ে কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা এটি। হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে হয়। লবণ অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে এবং গরম পানি গলা থেকে কফ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ গুলিয়ে দিয়ে কয়েকবার গড়গড়া করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
* ফ্রিজের খাবার এড়িয়ে চলা ও লেবু-চা পান : গলা ব্যথা হলে ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া উচিত নয়, এতে করে গলা ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। গলা ব্যথায় লেবু-চা খুবই উপকারী। এতে গলার কফও পরিষ্কার হয়ে যায়।
* কথা কম বলা : গলা ব্যথা করলে উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত নয়। এতে গলা ব্যথা বাড়ে। কথা কম বলা ভালো। এতে গলার বিশ্রাম হয় এবং ব্যথা তাড়াতাড়ি ভালো হয়।
* মাফলার বা কাপড় : রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গলায় একটি পাতলা মাফলার বা কাপড় হালকাভাবে পেঁচিয়ে নিলে আরাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে শীতের সময়।টনসিলের প্রদাহভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে টনসিলের প্রদাহ ও ইনফেকশন হতে পারে। এসব জীবাণুর মধে আছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা, এডেনো, রাইনো ভাইরাস। স্ট্রেপটোকক্কাস হিমোলাইটিকাস, নিউমোকক্কাস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষণ ও উপসর্গ
* প্রচণ্ড জ্বর
* গা ম্যাজম্যাজ করা ও ব্যথা হওয়া
* গলায় প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া* শুকনো কাশি হওয়া
* টনসিল লালচে হয়ে ফুলে যাওয়া
* টনসিলের ওপর সাদা আবরণ দেখা যেতে পারে
* লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া।চিকিৎসাগলা ব্যথাকে কখনোই হেলাফেলা করা উচিত নয়, তা যে কারণেই হোক না কেন। চিকিৎসা করার আগে এর কারণ নির্ণয় করা জরুরি।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
* অ্যান্টিবায়োটিক সেবন : মুখের লালার কালচার পরীক্ষা করে জীবাণু নিশ্চিত হয়ে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক, উপযুক্ত মাত্রায় সেবন করতে হবে।
* জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধ : জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করা ভালো। এ ছাড়া ব্যথার তীব্রতা অনুপাতে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে।
* অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ : মাউথওয়াশ বেশ কিছু জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। তাই মাউথওয়াশ ব্যবহারে গলা ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়।
* অপারেশন : কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। যেমন টনসিলের তীব্র ইনফেকশন।
Discussion about this post