হার্টবিট ডেস্ক
প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে এ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।
সপ্তাহব্যাপী নিবন্ধিত দরিদ্র রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্রস্রাব, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞসহ অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
পাশাপাশি দুই শতাধিক চক্ষুরোগীর চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। এছাড়া জনগণকে স্বাস্থ্যসচেতন করার লক্ষ্যে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুস্থ জীবনধারা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এখলাসুর রহমান।
ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ‘ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প’ এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সখিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার চিত্রা শিকারী।
সভায় অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ কিডনি রোগের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, কিডনিবিকল মৃত্যুর কারণ হিসেবে দুই যুগ আগে ২৭তম স্থানে, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ম স্থানে এবং ২০৪০ সালে দখল করবে ৫ম স্থান। দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিডনি রোগের হার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুই কোটিরও বেশি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনিবিকল রোগের চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, এদেশের শতকরা ১০ ভাগ লোক এই ব্যয় সংকুলান করতে পারে না। অথচ একটু সচেতন হলে, সুস্থজীবনধারা; যেমন- নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, প্রভৃতি নিয়ম মেনে চললে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনিবিকল প্রতিরোধ সম্ভব।
অধ্যাপক সামাদ মনে করেন, আর্তমানবতার সেবায় দিনটি উৎসর্গ করা ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি মোক্ষম উপায়।
সভায় প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, এমন মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকে ক্যাম্পস-এর মতো মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকাণ্ডে সরকারি ও বিত্তবান শ্রেণির মানুষদের সহযোগিতা খুব জরুরি।
স্বাগত বক্তৃতায় ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি নাসরিন বেগম, ক্যাম্পস-এর দীর্ঘ পথচলার কিছু চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রায় ৯৭ হাজার রোগী এই ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে দুই হাজার ৮৫০ জনের। ঠোঁটকাটা, তালুকাটা রোগীদের অপারেশন করা হয়েছে ৩০০ জনের।
ক্যাম্পস-এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন, ক্যাম্পস-এর মানবিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে, আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিতপ্রাণ, চিকিৎসক এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হালিম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্যাম্পস-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. হারিসুল হক, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেহরিন ফরহাদ সিদ্দিকা, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফাইজুল ইসলাম চৌধুরী, মূত্রতন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজফার উদ্দিন শেখ, সখিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল (লেবু), বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, সখিপুর পৌরসভার মেয়র আবু হানিফ আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম আহমেদ, সখিপুর উপজেলা হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি প্লানিং অফিসার ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান প্রমুখ।সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post