হার্টবিটডেস্ক
দেশের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সহযোগী কার্যক্রমে দক্ষ জনবল তৈরি এবং চিকিৎসা শিক্ষার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে রূপান্তর করে বাংলাদেশ অ্যালাইড হেলথ শিক্ষা বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত হেলথ শিক্ষাবোর্ড বাস্তবায়নের করতে গত বছরের অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় বোর্ডের আইনের কতিপয় ধারার সংশোধিত খসড়া প্রাপ্তি সাপেক্ষে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের লিভ টু আপিল নং ২১৪৩/১৬-এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যালাইড হেলথ শিক্ষাবোর্ড আইন-২০২১-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহমদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (আইন-২), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন বিশেষজ্ঞ, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের প্রতিনিধি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সসহ চিকিৎসা শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে আসছে। ২০০৫ সালে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা শুরু করলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০০৭ সালে গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের আওতায় পরিচালনা এবং রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে শিক্ষাবোর্ডে রূপান্তরিত করার সুপারিশ করেন। কিন্তু এ সুপারিশ উপেক্ষা করে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কোর্স পরিচালনা অব্যাহত রাখেন। এরই মধ্যে ২০১২ সালে নার্সিং কোর্স পরিচালনা শুর¤œ করলে জটিলতা আরো বাড়তে থাকে।
এ পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শূন্য পদে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পাস করা ব্যক্তিরা এতে অংশ গ্রহণের সুযোগ না পাওয়ায় তারা হাইকোর্টে মামলা করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নেওয়া হলে সর্বোচ্চ আদালত ২০১৬ সালে নভেম্বরে দেওয়া রায়ে ২০০৭ সালে গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের আলোকে ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তিন বছরেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় লিভ টু আপিল দাখিলকারীদের পক্ষ থেকে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে এবং আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ গড়িমসি শুর¤œ করেন। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এ অবস্থায় মেডিকেল টেকনোলজি এবং নার্সিং কোর্স পরিচালনা সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন মন্ত্রণালয়, কারগরি শিক্ষাবোর্ড, নার্সিং কাউন্সিল, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের ঊর্ধŸতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ২০১৯ সালে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়। কমিটি তাদের সুপারিশে সুপ্রিম কোর্টের লিভ টু আপিল নং ২১৪৩/১৬ মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিকেল টেকনোলজি এবং নার্সিং কোর্সসহ চিকিৎসা শিক্ষা সংক্রান্ত সব কোর্স ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাধ্যমে পরিচালনা করা এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজি ও নাসিং কোর্স বন্ধ করাসহ কোর্স পরিচালনার আইন বাতিলের মতামত দেন।
এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি ও নাসিং কোর্স এবং কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, বাতিল হয়েছে আইন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষাবোর্ডের খসড়া আইনের অধ্যায় ৩ এবং ২৮ ধারাটি (পেনশন ও আনুতোষিক) আইনে সংযোজন করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিবের মতামত চাওয়া হয়েছে, সেখান থেকে মতামত পাওয়ার পর যত দ্র¤œত সম্ভব মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিলকারী বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ‘সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে বোর্ডে রূপান্তরিত করার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বোর্ড গঠন করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। আদালতের এবং আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সব নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
Discussion about this post