ডা. লতিফা সুলতানা
নিরাময়-অযোগ্য রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করার একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাম পলিয়েটিভ কেয়ার। এর মাধ্যমে রোগীর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে বেদনাহীন, মর্যাদাপূর্ণ করার পাশাপাশি রোগীর পরিবারকে এই সংকট মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হয়। এই সহায়তা দেওয়া হয় মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও আত্মিক; অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে।
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের উদ্দেশ্য
• রোগের যন্ত্রণা ও শারীরিক অন্যান্য বেদনা থেকে মুক্তি দেওয়া।
• জীবনযাপনের মান উন্নয়ন করা।
• মানসিক ও আধ্যাত্মিক সেবা প্রদান করা।
• রোগকালীন সংকটে রোগীর পরিবারকে সহায়তা দেওয়া এবং মৃত্যু-পরবর্তীকালে রোগীর পরিবারের পাশে থাকা।
প্যালিয়েটিভ মেডিসিন: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
প্যালিয়েটিভ মেডিসিন হিসেবে সাধারণত আফিমজাতীয় ব্যথানাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের জন্য সার্বিক ব্যবস্থাপনা যেমন গড়ে ওঠেনি, তেমনি সঠিক ও পর্যাপ্ত ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহারও নেই।
প্রতিবন্ধকতা
• আফিমজাতীয় ব্যথানাশকের প্রতি সরকারি নিষেধাজ্ঞা।
• চিকিৎসকদের ভ্রান্ত ধারণা এবং যথাযথ জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাব।
• আফিমজাতীয় ওষুধ গ্রহণে ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সংস্কার।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার ও কতিপয় রোগ
• ক্রনিক কিডনি ডিজিজ/ডায়ালাইসিসের রোগী।
• আলঝেইমারস।
• বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার।
• পারকিনসন্স।
• এইডস।
• হার্ট ফেইলিউর
• বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট।
• ডিমেনশিয়া।
• স্ট্রোক।
• লিউকোমিয়া ও লিম্ফোমা।
• অ্যানিমিয়া ইত্যাদি।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিশ্চিত করতে যা জরুরি
• জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
• রাষ্ট্রীয় চিকিৎসাব্যবস্থা ও বার্ষিক বাজেটে প্যালিয়েটিভ কেয়ার যোগ করা।
• স্বয়ংসম্পূর্ণ প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ।
• প্রশিক্ষিত-দক্ষ প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ।
• যেসব রোগী হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না, তাঁদের জন্য বাড়িতে এ পরিচর্যা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থায় হোম কেয়ার সেবা।
• দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী
• রোগীর প্রতি পরিবারের মানুষদের আন্তরিকতা।
• পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার ও কিছু কথা
• বাবা–মা বা অন্য কেউ এমন রোগাক্রান্ত অবস্থায় থাকলে তার মাথার পাশে বসে আন্তরিকতা নিয়ে বলুন, ‘ভয় কি! আমরা সবাই পাশে আছি।’
• গৃহকর্মী বা বেতনভুক সেবক-সেবিকা দিয়ে নয়, বয়স্কদের সেবা করুন নিজ হাতে।
• রোগীকে কখনো একা রাখবেন না।
• বাধ্য হয়ে সেবক-সেবিকার সার্বক্ষণিক পরিচর্যায় রাখলেও দিন শেষে অন্তত একবার কিংবা যখনই সময় পাবেন, রোগীর পাশে বসে সময় দিন।
বিশেষজ্ঞ (অনকো প্যালিয়েটিভ), স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা
Discussion about this post