হার্টবিটডেস্ক
চট্টগ্রামে এক বছরে ক্যানসার রোগী বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। আর, অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে ৫০ বছরের কম বয়সী নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যানসারে। আবার ক্যানাসার রোগীর দুই–তৃতীয়াংশই পুরুষ। ছেলেদের বেশি আক্রান্ত মুখগহ্বরের ক্যানসারে।সম্প্রতি চমেক হাসপাতালের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলী আসগর চৌধুরী বলেন, রোগী প্রতিবছর বাড়ছে। এবারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তবে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেকের বয়স ৫০ বছরের নিচে। এটা উদ্বেগজনক। এ নিয়ে আরও গরেষণা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ক্যানসার বলতেই কমবেশি রক্তশূন্যতা হবেই। খাবারে অরুচি, বমি ভাব, ক্লান্তি এবং অবসাদ, শরীরের ওজন কমে যাওয়া এইসব উপসর্গ থাকবে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
গবেষকদের মতে, কম বয়সে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সঠিক কারণ খুঁজতে এ নিয়ে গবেষণা করা দরকার। তাঁদের সম্ভাব্য কারণের মধ্যে অসচেতনতা এবং জিনগত ব্যাপার থাকতে পারে। আর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে ধূমপান, জর্দা, তামাকজাতীয় দ্রব্যসহ নানা কারণে মুখগহ্বর, গলা ও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।আমাদের জন্য যেটা সবচেয়ে ভয়ের বা আতঙ্কের, সেটা হলো মুখের ক্যানসার।
চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের বহির্বিভাগে ২০২১ সালে ১৭ হাজার ৪৭৬ রোগী চিকিৎসা নেন। তার মধ্যে ক্যানসার আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩। অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নেন ২ হাজার ৯৬৪ জন।
আগের বছর (২০২০ সাল) নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৬২৬ জন। দুই বছরই নারীর তুলনায় মোট পুরুষ রোগীর হার প্রায় ৬৫ শতাংশ। ওই বছর বহির্বিভাগে মোট রোগী ছিল ১৪ হাজার ২১৯ জন। ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন ২ হাজার ২৬৮ জন।
এ বছর বহির্বিভাগে নতুন নারী রোগী পাওয়া যায় ২ হাজার ২৩৩ জন। এর মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ২৪ শতাংশ। এরপরই জরায়ুমুখের ক্যানসারের অবস্থান—২০২ জন বা ১৬ শতাংশ।
নারীদের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মুখগহ্বর ও গলার ক্যানসার। আবার পুরুষের ক্ষেত্রে এটি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
১৯ শতাংশ বা ৭৭১ জন পুরুষ গত বছর গলা ও মুখগহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এরপর ৬৯০ জন (১৭ শতাংশ) আক্রান্ত হন ফুসফুস ক্যানসারে। খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৪৪৬ জন (১১ শতাংশ)।
চিকিৎসকদের মতে, খাদ্যাভ্যাসের কারণে অঞ্চলভেদে রোগীর তারতম্য হয়, যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন সার্জারি (ক্রিকস) চমেক হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৭০৪ জন রোগীর ওপর ২০১৮ সালে একটি গবেষণা চালায়।
গবেষণায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারের রোগী ছিল—সাড়ে ১২ শতাংশ বা ৮৯ জন। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের ৩৮ জন বা সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বাঁশখালীর ৩৬ জন বা ৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম নগরের ঠিকানা ব্যবহারকারী ২০২ জন রোগী ছিল।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা: ফাহমিদা আলম বলেন, প্রায় ৯৯% জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী একটি ভাইরাস যার নাম, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর পর শরীরে দেখা দেয় এই ক্যানসার। জরায়ু মুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হতে পারে প্যাপ স্মিয়ার নামক পরীক্ষাও। অত্যন্ত সহজ এই পরীক্ষায় জরায়ু মুখের কিছু কোষ সংগ্রহ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা হয় যে সেই কোষগুলির মধ্যে ভবিষ্যতে ক্যানসার তৈরির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না। ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি নারীরা প্রতি দু’বছর অন্তর এই পরীক্ষা করিয়ে নিলেই থাকতে পারেন নিশ্চিন্তে। অর্থাৎ সামান্য সচেতনতাই এই মারণ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে আপনাকে বা আপনার প্রিয়জনকে।
গবেষণাকাজের প্রধান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক তাহমিনা বানু বলেন, শুঁটকিসহ নানা খাদ্যাভ্যাসের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ক্যানসার রোগী বেশি। কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের লোকজনের মধ্যে শুঁটকি খাওয়ার প্রবণতা বেশি।
তবে আশার কথা, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছরে ক্যানসারের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ক্যানসার মানেই মৃত্যু এই প্রচলিত ধারণা এখন অতীত। রোগ ধরা পড়ার শুরুর সময় থেকে কিছুটা নিয়ম মেনে চললে অনেকাংশেই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
Discussion about this post