ইসরাত জাহান,পুষ্টিবিদ
শীতের সবজি মুলা পাওয়া যায় নানা রঙে। একেকটিতে আবার একেক রকম পুষ্টিগুণ। প্রচলিত রংগুলোর মধ্যে সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ মুলা পাওয়া যায়।
মুলার পাতা শাক হিসেবে খেলেও উপকার পাবেন নানা রকম। কী উপকার, সেটা এবার বিশদে জানাচ্ছি। জন্ডিসের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে বিশেষভাবে বিবেচিত হয় মুলা। মুলার পাতা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। জন্ডিসে মুলার রস ভালো। কারণ, এটি শক্তিশালী ডিটক্সিফাইং, টক্সিন ও রক্ত বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। মুলা জন্ডিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। কারণ, এটি বিলিরুবিন অপসারণ করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে বিলিরুবিনের উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করে। মুলা অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া ঠেকাতে কাজ করে।
মুলা মূত্রবর্ধক সবজি। তাই এ সবজি প্রস্রাব উত্পাদন উদ্দীপনা দ্বারা কিডনি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মুলার রস প্রদাহ নিরাময়ে কার্যকর। প্রস্রাবে জ্বলুনি ভাব কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। কিডনিতে যেকোনো সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে। কিডনির অন্যান্য ব্যাধি সারাতেও মুলা ভালো।
মুলায় থাকা ভিটামিন সি আমাদের দেহে ফ্রি–র্যাডিক্যালগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে এবং দেহের কার্টিজের যেকোনো ক্ষতি প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনেও সহায়তা করে। মুলা খেলে বাতের ব্যথাতেও উপশম মেলে।
মুলা কোলন, পেট, অন্ত্র, মুখ ও কিডনি ক্যানসারের বিভিন্ন স্ট্র্যান্ডের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। মুলা ক্যানসারের কোষগুলোকে পুনরুৎপাদন করতে বাধা দেয়।
মুলাতে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিনগুলোর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে, যা কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ, হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, এমনকি কিডনি রোগের মতো অন্য প্রভাবগুলোও মুলা খাওয়ার কারণে কমে আসে।
ওজন কমাতেও খাদ্যতালিকায় মুলা রাখুন চোখ বন্ধ করে। মুলায় কার্বোহাইড্রেট কম, বিপরীতে পানি থাকে প্রচুর। মুলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আঁশযুক্ত খাবার আপনাকে দ্রুত পেট ভরার ইঙ্গিত দেবে। এ কারণে বেশি খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাবে।
মুলায় আছে পটাশিয়াম। মুলা তাই রক্তের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ কমায়। মুলার রস রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে না। কারণ, এতে গ্লাইসেমিক সূচক কম রয়েছে। মুলা রক্তপ্রবাহে শর্করার শোষণকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সেবন করা নিরাপদ। মুলার মধ্যে অ্যান্টি-কনজারভেটিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নাক, গলা ও ফুসফুসের জ্বালা রোধ করতে সহায়তা করে। এ জ্বালা মূলত সর্দি, ইনফেকশন, অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। মুলা শ্বসনতন্ত্রকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
মুলার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো
মুলায় থাকা ভিটামিন সি শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে। কোলাজেন রক্তনালিগুলোর দেয়াল শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। মুলা বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগের সূত্রপাতকে প্রতিরোধ করে।
মুলার রস মাথার ত্বকে ঘষলে খুশকি ও চুল পড়া কমে। মুলার রসে জলপাই তেল মিশিয়ে মালিশ করলে শুষ্ক ত্বক মোলায়েম হবে। শীতে হাত-পায়ের ফাটল নিরাময়েও সহায়তা করবে। নিয়মিত মুলা খেলে খুশকি দূর হয়ে যায়। চুলকে স্বাস্থ্যকর ও ঝকঝকে করে তোলে। কাঁচা মুলা প্রাকৃতিক ক্লিনজার ও কার্যকর ফেস প্যাক হিসেবে কাজ করে।
মুলার অপকারিতা
যদিও মুলার মূত্রবর্ধক প্রকৃতি আমাদের পক্ষে উপকারী, তবে এখনো এগুলো সংযম করে খাওয়াই ভালো। কারণ, অনেক বেশি মুলা খাওয়া আমাদের শরীরকে অতিরিক্ত জল হারাতে বাধ্য করতে পারে। শরীরকে এটি পানিশূন্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। অনেকের কিডনির ওপর এটি চাপ তৈরি করতে পারে।
একইভাবে আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতিমধ্যে ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তবে আপনার ডায়েটে মুলা না রাখাই ভালো। কাঁচা মুলা থাইরয়েডের পক্ষে তেমন ভালো না। মুলায় থাকা নাইট্রোজেন নামের একটি যৌগ আছে, যা থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষতি করতে পারে।
Discussion about this post