চৌধুরী তাসনিম হাসিন
বর্তমান যুগে বেশিরভাগ মা’ই বাচ্চাদের নিয়ে একটি সমস্যার সম্মুখীন হন। আর তা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। এ সমস্যাটি দেখা যায় ছয় মাস থেকে শুরু করে ১২ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের। সাধারণত বয়স ভেদে বাচ্চারা দিনে ১ বা ২ বার মলত্যাগ করে থাকে। কখনো যদি তার অনিয়মিত হয় অথবা অতিরিক্ত শক্ত বা শুষ্ক হয় তখন তা বাচ্চাকে নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন করে। আবার এই কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টিতে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাস একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বেশিরভাগ সময় ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য যখন মলত্যাগ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যায় তখন তারা মলত্যাগের ব্যাপারটা চেপে যেতে চেষ্টা করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।এক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার ব্যাপারে। বয়স ভেদে বাচ্চাদের দৈনিক ১-২ লিটার পানি এবং তরলজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় থাকা জরুরি। অতিরিক্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি উপাত্ত।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে বাচ্চাদের ক্ষুধা কমে যায়, খাবারের প্রতি চাহিদা কমে আসে, সর্বোপরি দিনে দিনে ওজন কমতে থাকে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, এমনকি দেখা দিতে পারে বিষণ্নতাও। পেটে ব্যথা, পেট ফুলে ওঠা, বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, ইউরিনারি সিস্টেম বাধাগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদিও কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার অর্থাৎ আঁশযুক্ত খাদ্যের একটি সুষম সমন্বয় করতে হবে।
প্রতিদিন ১টি অথবা ২টি খোসাযুক্ত ফল, অন্তত ১ সারভিং শাক এবং ২ সারভিং সবজি খাদ্য তালিকায় থাকা জরুরি। প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে শুধু মাংসকে প্রাধান্য না দিয়ে বিভিন্ন রকম মাছের উপস্থিতি রাখতে হবে। কুসুম গরম দুধ কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করে। স্ন্যাকস্ অথবা ফিংগার ফুড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন ফল অথবা সালাদ। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অত্যন্ত জরুরি সঠিক পরিমাণে শরীরচর্চা। বয়সভেদে ১-৩ ঘণ্টা সূর্যের আলোয় খেলাধুলা করা বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি, যা তার ডায়জেস্টিভ সিস্টেমকে সচল রেখে খাদ্যের হজম জনিত সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে।
এই রোগের প্রারম্ভেই বাবা-মাকে যথেষ্ট সতর্ক হয়ে যেতে হবে। কারণ এটি শারীরিক ও মানসিক দু’ভাবেই শিশুকে বিপর্যস্ত করে ফেলে এবং ব্যাহত হয় তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি।
লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা।
Discussion about this post