ডা. মো. নাজমুল হক
জন্মগত ত্রুটি ছাড়া সাধারণত শিশু বয়সে হৃদরোগের সমস্যা হয় না। এ ধারণা পোষণ করায় অনেক বাবা-মাই সন্তানের বুকে ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কখনো কখনো এটি আপনার শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, ৯৫ বা তারও বেশি ভাগ ক্ষেত্রে শিশুর বুকের ব্যথা হার্টের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে ১ থেকে ৪ শতাংশ শিশুরই বুকে ব্যথা হৃদরোগের সমস্যার জন্য হতে পারে। তাই সবসময় সন্তানের বুকে ব্যথাকে অবহেলা করা যাবে না।
হপকিন্স চিলড্রেন’স সেন্টারের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের এমডি উইলিয়াম রাভেকস মনে করেন অস্থির জীবনধারা, ফাস্ট ফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ও মানসিক অস্থিরতার কারণে শিশুদের হৃদরোগের প্রবণতা বাড়ছে।
বুকে কেমন ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
১. শিশুর বুকের ব্যথার তীব্রতা যদি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও বাড়তে থাকে তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
২. বুকে ব্যথা যদি ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপের সময় ঘটে
৩. শ্বাসকষ্টের সাথে যদি ব্যথা থাকে
৪. বুকের ব্যথায় শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে
৫. হার্টের ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা (জন্মগত হৃদরোগ) বুকে ব্যথা অনুভব করলে
৬. কাওয়াসাকি রোগে আক্রান্ত শিশুদের বুকে ব্যথা হলে
৭. যেসব বাচ্চাদের উচ্চ কোলেস্টেরলের জেনেটিক কারণ রয়েছে তাদের বুকে ব্যথা হলে
৮. অব্যক্ত কারণে মারা যাওয়া পরিবারের সদস্যদের সাথে শিশুদের বুকে ব্যথা অনুভব করলে
৯. কার্ডিওমায়োপ্যাথি আছে এমন পরিবারের সদস্যদের বাচ্চাদের বুকে ব্যথা করলে
১০.আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের ইতিহাস জানাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার পরিবারে জন্মগত হার্টের অবস্থা চলে, বা পরিবারের সদস্যরা অল্প বয়সে হঠাৎ মারা যায়, তাহলে আপনার সন্তানের হার্টের স্বাস্থ্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
সন্তানের বুকের ব্যথা নিরীক্ষণ করতে অভিভাবক কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
পিতামাতারা তাদের সন্তানের বুকের ব্যথা নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারেন এমন বিভিন্ন উপায় রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনার শিশুকে তাদের লক্ষণগুলো সম্পর্কে আপনি সঠিক ভাবে জানুন।
শিশুর বুকে ব্যথা হলে যা করবেন
আপনার সন্তান বুকে ব্যথার কথা জানালে তাকে ১ থেকে ১০ স্কেলে ব্যথার তীব্রতাসহ বুকে ব্যথা সম্পর্কে নির্দিষ্ট বিবরণ দিতে বলুন। এ সময় সন্তানের নাড়ি নিয়মিত পরীক্ষা করুন। যদি এটি ১৬০- ১৮০ এর বেশি হয়, তাহলে অবিলম্বে কার্ডিওলজিস্টকে অবহিত করুন। এছাড়া আপনার সন্তানের বুকে ব্যথার মতো কোনো বিষয় থাকলে সেটি স্কুলে বা তার বন্ধুদের অবহিত করুন। যাতে এ ধরনের সমস্যার সময়ে তারা অবদান রাখতে পারে।
পাশাপাশি শিশুর খাদ্যাভাস পরিবর্তন ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ানোর সাথে সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আসুন উপরের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করি ও আমাদের সন্তানদের হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখি।
অতিথি লেখক ডা. মো. নাজমুল হক বিএনএস হাজী মহসিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
Discussion about this post